বগুড়ায় পাড়া মহল্লা থেকে চামড়া কিনে পথে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দাম না পেয়ে শহরের বাদুরতলা এলাকাসহ আশেপাশের এলাকা ও করতোয়া নদীর ধারে এবং বিভিন্ন রাস্তার পাশে খাসি ও ভেড়ার চামড়া ফেলে দেয়া হয়েছে। শহরে বড় ধরনের বায়ু দূষণের আশঙ্কায় পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়কের পাশ থেকে এসব চামড়া তুলে নিয়ে শহরের ঠেংগামারা এলাকার ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক কম দামে কোরবানির চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়। সরকার প্রতিবছর চামড়ার দাম বেঁধে দিলেও তা কোনো কাজে আসে না। অদৃশ্য এক সিন্ডিকেটের ফাঁদে হাবুডুবু খায় ঈদের কাঁচা চামড়ার বাজার। বগুড়া পৌরসভার ট্রাক ড্রাইভার আশাদুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আবর্জনার সঙ্গে পড়ে থাকা চামড়াগুলো তুলে নিয়ে ফেলে দিচ্ছি। আমরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাঁচ ট্রাক চামড়া নিয়ে এসে ফেলেছি আরও দুই ট্রাক নিয়ে এসে ফেলতে হবে। স্থানীয় আড়তদাররা বলেন, ট্যানারি মালিকরা চামড়া নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন না। দুই তিন বছরের বকেয়া পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা। তবে ট্যানারি মালিকরা বলেছেন, আড়তদারদের দাবি ঠিক নয়। দেউলিয়া প্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবাই বকেয়া পরিশোধ করেছে। তাছাড়া ব্যবসা করতে গেলে দেনা-পাওনা থাকবেই। এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ আগে চামড়ার দাম ঠিক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকার জন্য লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অন্যদিকে খাসির চামড়া সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবার এই দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। সে কারণে দাম গতবারের চাইতে একটু ভালো হবার কথা। হয়েছে তার উল্টো। এবার বগুড়ায় ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া কিনছেন সর্বনিম্ন ৩০০ টাকায় ও সর্বোচ্চ ৯০০। খাসির চামড়া সকালের দিকে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। বাদুড়তলার এক চামড়া ব্যবসায়ী জানান, গতবারের তুলনায় এবার দাম বেশি রয়েছে। তবু চামড়া চাহিদামতো কেনা যাবে না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মোস্তফা জানান, গত বছর গরুর চামড়া কিনে ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবার ক্ষতি লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ তাদের কেনা চামড়ার মধ্যে ৩০ হাজার টাকার চামড়া ছাগলের ছিল। এগুলো কোনো দামই পাননি তারা। বগুড়া চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে ২৫ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। অথচ ট্যানারি মালিকরা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না। ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেয়ায় অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছে। একটি চামড়া কেনার পর তা প্রসেসিং করতে অনেক খরচ হয়। এ কারণে আড়তদারদের চামড়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম ছিল।
Leave a Reply