স্টাফ রিপোর্টার মোঃ আমানুল্লাহ আমান
বগুড়া শেরপুরের হোটেল কর্মচারী বেলালের জীবন যুদ্ধ মাথার চুলগুলো এলোমেলো। চোখের গোঁড়ায় কালো দাগ। পরনের প্যান্ট ও গায়ে জড়ানো গেঞ্জিতে অপরিষ্কার ছাপটা ছিল স্পষ্ট। নাম বেলাল হোসেন। বয়স হবে বড়জোর ১২বছর। কিছুটা পাগলামির ভাবও রয়েছে এই ছেলেটির মাঝে। কথায় রয়েছে যথেষ্ট অস্পষ্টতা। হোটেল কাশবন এ্যান্ড রেস্টুরেন্টে বসে কথা হচ্ছিলো তার সাথে। জীবনের কথা শোনাতে গিয়ে অনেক সময় মনমরা হয়ে পড়ে বেলাল। একপর্যায়ে কথা বলতেই বেরিয়ে এলো গালভর্তি ফোকলা দাতের হাঁসি। এরপর বেঞ্চ থেকে উঠে সোজা হোটেল কাশবনের ভেতর চলে যায় বেলাল। হাতে ঝাঁড়ু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হোটেল কাশবনের ভেতরে চেয়ার ও টেবিলে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে থাকে বেলাল। ঝাঁড়ুর কাজ শেষ করে চায়ের কাপ পরিষ্কার করতে শুরু করে। আবার মালিকের কথামত কাস্টমারের হাতে পৌঁছে দেয় চা ভর্তি কাপ। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় বেলালের এই জীবন যুদ্ধ। দুপুরে বেশ কিছুটা সময় চায়ের কাজ থেকে বিরত থাকে সে। তবে হোটেলে আশা কাস্টমারের কাছে দৌঁড়ে গিয়ে বলে স্যার আপনি কি খাবেন, ভাত না বিরানী। ঠিকমতো দেখভাল করেও বটে কাস্টমারের। যেন কোন কিছুর সমস্যা না হয় কাস্টমারের। এতেই যেন তার কাজ শেষ নয়। তারপর রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে মালিক ও অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে বেলালের কর্মযজ্ঞতা। তবে মালিকের কাছে স্বাধীন সে। ইচ্ছেমতই সে কাজকর্ম করে থাকে। বিনিময়ে মাস শেষে বেলালের পরিবারে সম্ভাব্য খরচা প্রদানসহ কর্মের মাধ্যমে বেলালকে মানুষ করার দায়িত্ব নেন হোটেল কাশবন এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো: ইয়াকুব আলী। বেলাল কথাবার্তায় এবং জ্ঞানবুদ্ধি একটু কম মনে হলেও তার কাজকর্মে এবং সততায় হোটেল মালিক অত্যান্ত বিশ্বাস্ত ও খুশি হয়ে বেলালের এহেন দায়িত্ব নেন। পাশাপাশি ভাত বিরানী খায় ওর মনমত। কাজ শেষে মালিকের বাসায় গিয়ে ঘুমায় বেলাল। মালিক থেকে শুরু করে কাস্টমাররা বেলালের প্রতি অনেকটা সদয়।
বগুড়ার শেরপুর পৌরশহরের স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ড (পুরাতন বাসপট্রি) এলাকায় মুন-ইরাফি গার্ডেন সিটি মার্কেটে অবস্থিত হোটেল কাশবন এ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মচারীর কাজ করে এই বেলাল।
বেলাল ও তার পরিবার সম্পর্কে জানতে হোটেল কাশবন এ্যান্ড রেস্টুরেন্ট মালিক মো. ইয়াকুব আলীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, অভাবী সংসারের হাল ধরেছে বেলাল। দুই ভাই ও দুই বোন নিয়ে চরম দু:খ কষ্টের মাঝে দিনানিপাত করতেন তিনি। এর মধ্যে বড় ভাই বগুড়ার একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় হাফেজী লাইনে পড়া শোনা করেন।
Leave a Reply