শামসুর রহমান নিরব স্টাফ রিপোর্টার :
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় রাজিয়া খাতুন (২৪) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার সকালে বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা-কালীগঞ্জ সড়কের মামুন ব্রিকসের সামনে থেকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রাজিয়া যশোর শহরতলীর পাগলাদহ এলাকার মোজাহার বিশ্বাসের ছেলে শহিদ বিশ্বাসের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং মণিরামপুর উপজেলার রসুলপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ওই গৃহবধূর স্বামী শহিদুলকে আটক করা হয়েছে। আটক শহিদুল যশোরের আলোচিত চুন্নু হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ সার্কেল) জামাল আল নাসেরসহ গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা।
রাজিয়ার স্বামী শহিদুল সাংবাদিকদের জানান, তিনি প্রায় ছয় মাস আগে রাজিয়াকে বিয়ে করেন। তার (শহিদুলের) এটা দ্বিতীয় বিয়ে। আগের ঘরে রাকিব নামে চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে শহিদুলের। বিয়ে করার পর রাজিয়াকে নিয়ে বাঘারপাড়ার জহুরপুর এলাকার ‘মামুন ব্রিকসে’ শ্রমিকের কাজ নেন তিনি।
শহিদুলের দাবি, গত সোমবার মণিরামপুর উপজেলার রসুলপুরে রাজিয়াকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে ছিলেন তিনি। সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থল ইটভাটায় ফেরেন। ঐদিন রাত দুইটার দিকে কয়েক ব্যক্তি ‘ভাটার লোক’ পরিচয়ে তার ঘরের দরজা খুলতে বলে। দরজা খোলা মাত্রই ঘরে ঢুকে তাকে মারপিট শুরু করে ওই ব্যক্তিরা। এক সুযোগে তিনি (শহিদুল) দৌড়ে পাশের মাঠে পালিয়ে যান। এর দুই ঘণ্টা পর ভাটার নৈশপ্রহরীকে নিয়ে ঘরে গিয়ে দেখেন, তার স্ত্রীর বিবস্ত্র নিথর দেহ পড়ে আছে। ভাটার মালিক মামুনকে জানালে তিনি পুলিশকে খবর দেয়।শহিদুল বলছেন, সম্প্রতি একটি ভাটার পাশে তৈলকূপ গ্রামে একটি মেয়েলি ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৫-১৬ ব্যক্তি হামলা চালায়। তিনি পালিয়ে যাওয়ায় দুর্বৃত্তরা তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
শহিদুলের এসব বক্তব্য সঠিক কি-না তা যাচাই করে দেখছে পুলিশ।
ইটভাটার নৈশপ্রহরী আবু তাহের বিশ্বাস বলেন, ‘সোমবার দিনগত রাত চারটার দিকে কাদা-পানি মাখা অবস্থায় শহিদ ভাটার অফিসে এসে আমাকে ডাকে। শহিদের সাথে গিয়ে দেখি তার স্ত্রীর উলঙ্গ লাশ ঘরের সামনে পড়ে রয়েছে। আমি সাথে সাথে ভাটার মালিককে ফোন করে বিষয়টি জানাই।’
খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই জুম্মান খান জানান, ভাটার মালিকের ফোন পেয়ে ভোর পাঁচটার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ওই সময় ভাটার পশ্চিমে ঝুঁপড়ি ঘরের সামনে মাটিতে ওই গৃহবধূর লাশ পাওয়া যায়। নিহত গৃহবধূর স্বামী শহিদকে জখম অবস্থায় লাশের পাশে ছিলেন। প্রাথমিকভাবে শহিদকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। লাশের সারা শরীরে বেøড দিয়ে কাটা ও ইটের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান এসআই জুম্মান খান।
জানতে চাইলে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আল-মামুন বলেন, ‘গৃহবধূর স্বামী যশোরের আলোচিত চুন্নু হত্যা মামলার প্রধান আসামি। দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থাকার পর এক বছর আগে দেশে ফিরে বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করতো সে। এলাকায় তার প্রতিপক্ষ রয়েছে।’
ওসি জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। শহিদুলকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওসি সৈয়দ আল-মামুন।
Leave a Reply