আনন্দ টিভির নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি এবং নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ এর সম্পাদক সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকনকে হত্যার চেষ্টাকারী সন্ত্রাসী সোয়াদ এখনও অধরা। এ হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মিজান সহ তিনজনের মধ্যে দুইজন সাংবাদিক সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ও জামাল তালুকদার বর্তমানে হাসপাতালের বেডে শয্যা রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশ গাফলতি করছে। মামলার বাদি আহত সাংবাদিক লিংকন সকল তথ্য দিয়ে পুলিশকে সর্বদাই সহযোগীতা করে যাচ্ছে। এরপরও সন্ত্রাসী সোয়াদকে গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ।
এদিকে ওই ঘটনার সময় সন্ত্রাসী সোয়াদকে দেশীয় অস্ত্র সহ আটক করে রাখলেও পরবর্তিতে অস্ত্রটি নদীর তীরে ফেলে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করে আব্দুর রহমান। এছাড়াও ঘটনাস্থলেই সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে সেখান থেকে যেতে দেয়া হবে না বলেও বিভিন্ন হুমকী দমকী দেয় ওই নামধারী আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রহমান। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলে তাকেও আলামত গুম সহ পালাতে সহযোগীতা করায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
জানা গেছে, এ হামলার ঘটনার পর সন্ত্রাসী সোয়াদ ট্রলার দিয়ে নদী পার হয়ে, তীরে কোন এক ভাইয়ের পরিচয় ব্যবহার করে বিশাল বাহিনী নিয়েও লিংকনকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপেক্ষারত ছিল। তবে কৌশলে পুলিশ বাহিনীকে খবর দিয়ে আসার কারণে আবারো প্রাণে রক্ষা পায় লিংকন সহ অন্যান্য সাংবাদিকরা। কিন্তু এ ঘটনার তিনদিন অতিক্রম হলেও এখনো সন্ত্রাসী সোয়াদকে গ্রেফতার না করায় পুলিশের অসহায়ত্ব ও দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের অনেকেরই দাবী, যেন দ্রæত এই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। এছাড়াও তার কাছে থাকা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ব্যবহৃত অস্ত্র গুলো উদ্ধার করা হোক। বের করা হোক সন্ত্রাসী সোয়াদের বাকী শেল্টারদাতাদের। কারণ তার অত্যাচারে অতিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবী, শ্রমিক সহ সাধারণ মানুষ।
আরো জানা গেছে, আব্দুর রহমানের মত অন্যান্য রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহারকারীরা সন্ত্রাসী সোয়াদকে দিয়ে নানা অপকর্ম করাতো। এম সার্কাস, হাজিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, ঈশা খাঁ কেল্লা আশপাশে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, মারামারী সহ অধিপত্য বিস্তারে সোয়াদ অস্ত্র দিয়ে মানুষকে হামলা করে আহত করায় অভ্যস্থ। জড়িত রয়েছে বিভিন্ন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে। মাদক বিক্রি ও সেবন সহ তার নৈরাজ্যের কাছে সাধারণ মানুষ আতংকিত ও অসহায়। এরআগেও তাকে বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ গ্রেফতার করেও ছেড়ে দেয় বলে জানায় স্থানীয়রা।
অন্যদিকে বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে হামলার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের দ্রæত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে সাংবাদিকরা বলেন, হামলার ঘটনায় আমরা পুলিশের কোন সহযোগীতা পাচ্ছি না। পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করা হলেও সন্ত্রাসীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। হামলার পর থেকেই আমরা পুলিশের এক একটি তালবাহানা দেখে যাচ্ছি। হামলার সময় সদর থানায় কল দিয়ে তাৎক্ষনিক সাহযোগীতা না পাওয়ারও অভিযোগ করেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা আরো বলেন, আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। হামলাকারী সোয়াদকে দ্রæত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সন্ত্রাসী সোয়াদকে গ্রেফতার করা না হলে শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় সারাদেশের সাংবাদিকদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামবো।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) সোনারগাঁ লোক ও কারু শিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর আগমনীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে যাচ্ছিলেন সাংবাদিকরা। পথিমধ্যেই শীতলক্ষ্যা নদী পার হতে হাজীগঞ্জ ঘাট থেকে ফেরিতে ওঠেন আহত তিন সাংবাদিকসহ স্থানীয় ও জাতীয় গন্যমাধ্যমে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক। ফেরি চালু হবার পর দেখা যায় এক শিশুকে মারধর করছে সন্ত্রাসী সোয়াদ নামের যুবক সহ অন্যান্যরা। তাতে প্রতিবাদ জানিয়ে শিশিুটির অভিভাবক কে বিচার দেয়ার পরার্মশ দেন সাংবাদিক সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন। কিন্তু এতে উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিক লিংকনকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। একপর্যায়ে দস্তাদস্তি হলে আগে থেকেই সংরক্ষিত করা ধারালো একটি গেতি শারস (মাটি কাটার যন্ত্র) নিয়ে এসে এলোপাথারি কোপ দিতে থাকে। পরবর্তিতে জীবন রক্ষার্থে তাকে প্রতিহিত করে আহত হন সাংবাদিক লিংকন। এসময় সাংবাদিকের মটর সাইকেল কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে আরও আহত হন সাংবাদিক জামাল তালুকদার ও মিজানুর রহমান। একপর্যায়ে ওই যুবকের হাত থেকে ধারালো শারস ছিনিয়ে নিয়ে তাকে আটক করা হয়। তবে আবদুর রহমান ছাড়িয়ে নিয়ে তাকে পালাতে ট্রলারে উঠিয়ে দেয়।
Leave a Reply