জন্ম থেকেই ডান হাত থেকেও নেই সামিয়া আক্তারের। এই হাতে কোন কাজ করতে পারেনা সে। ডান হাতের অঙ্গুলগুলো খুবই ছোট। আর শক্তিও পায় না হাতটিতে। ফলে লিখতে বা কোন কাজ করতে হলে বাম হাতই ভরসা তার। তাই বাম হাতেই দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষ। গায়ের চাদরে বাম হাতটি ঢেকে দ্রুত গতিতে লিখে চলেছে সামিয়া। স্বপ্ন বুনে চলেছে চিকিৎসক অথবা প্রকৌশলী হবার।
যশোরের চৌগাছার নারায়নপুর বাহারাম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিষয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। তবে বাম হাতে পরীক্ষা দিলেও প্রতিবন্ধীদের দেয়া অতিরিক্ত সুবিধা নিচ্ছেনা সামিয়া। কক্ষ পরিদর্শকের কাছে তার আবেদন থাকছে সবার খাতা নেয়া শেষ হলেই যেন তার খাতা নেয়া হয়। কেন্দ্রের ২য় তলার ৭ নং রুমের সামনের বেঞ্চে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে সামিয়া। ফলে প্রথম দিনেই নজরে পরে কেন্দ্র পরিদর্শক সরকারি শাহাদৎ পাইলট স্কুলের গণিতের সহকারি শিক্ষক হামিদুর রহমানের।
হামিদুর রহমান বলেন প্রথমে আমি বিষয়টি বুঝতেই পারিনি। পরে শিক্ষার্থীটি আমার কাছে বলে স্যার আমাকে অতিরিক্ত সময় দেয়া লাগবে না। সবার খাতা নেয়ার পর আমার খাতাটা নিবেন। ফলে ৫/৭ মিনিট যে সময় পাব তাতেই আমার চলবে। হামিদুর রহমান আরো বলেন বামহাতে লিখলেও সামিয়ার হাতের লেখা মুগ্ধ করার মত সুন্দর। সামিয়া উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের আন্দুলিয়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন সাজু ও রুজিনা আক্তার দম্পতির মেয়ে।
দরিদ্র পরিবারের সামিয়া ছোটবেলা থেকেই নারায়নপুর গ্রামে নানার বাড়ি থেকে লেখাপড়া করে। বাম হাতে লিখেই ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতেও কৃতিত্বের সাথে পাশ করে নারায়ণপুর বাহারাম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় সামিয়া। সেখান থেকে স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ৭জন পরীক্ষার্থীর সাথেই দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষা। নারায়নপুর বাহারাম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানালেন, প্রথমদিকে কোন একদিন (হয়ত তখন সামিয়া ৬ষ্ট বা ৭ম শ্রেণিতে পড়ে) আমি তাকে ক্লাস নিতে গেলে আমাকে হোমওয়ার্কের কাজ দেখাতে সামিয়া বাম হাত দিয়ে দেয়। আমি মনেমনে ভাবি মেয়েটা কি বেয়াদবি করে এমন করল? আমি আবারো (মনে মনে রাগ করেই) কিছু একটা তার কাছে চাইলাম।
সে আবারো বামহাত দিয়েই সেটা দেয়। আমি খেয়াল করে দেখি ওর ডান হাত ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা। তখন সামিয়াকে কাছে ডেকে দেখি ওর ডান হাতের এই অবস্থা। প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন মেয়েটি খুবই মেধাবী। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতেও সে ভাল ফলাফল করেছে। ডানহাত অকেজো থাকার পরও সে বিজ্ঞান বিভাগ নেয়ার সাহস দেখিয়েছে। সামিয়া জানায় একহাতে লিখেই সে মানুষের মত মানুষ হতে চায়। দরিদ্রতাকে জয় করেই চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা তার। তবে প্রথম ইচ্ছা অবশ্যই মানুষের মত মানুষ হওয়া
Leave a Reply