কক্সবাজার জেলার উখিয়ার সন্তান তরুণ উদ্যোক্তা পালং কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক, জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকার সহ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং মাতৃজগত টিভির নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক ইয়াকিন এর পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা।
মহাসড়কে মহাজট কিংবা শেষ মুহুর্তের কেনাকাটায় উপচে পড়া ভিড়- এমন কোনোটিই নেই এই ঈদে। করোনার এই মহামারির দিনে দুয়ারে কড়া নাড়ছে এক বিষণ্ণ ঈদ।
পবিত্র রমজান মাসের এক মাস সিয়ামসাধনার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর সমাগত।
তবে এবারের ঈদকে কোনোভাবেই ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ বলা যাবে না। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার সঙ্গে ঈদের খুশির খানিকটা ঝিলিক নিয়ে আসছে এ ঈদ।
অদৃশ্য শত্রু করোনার থাবায় কোটি মানুষ আজ কর্মহীন। দু’বেলা খাবারের সন্ধানে অগণিত মানুষ। এমন সময় ঈদ উৎসব শুধুই বিষণ্ণতার এবং কষ্টের।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮৮ সালের বন্যার মধ্যেই কাটে দুইটি ঈদ। এবং এর দশ বছর পর ১৯৯৮ সালের বন্যার পরেই আসে রোজার ঈদ। বিধ্বস্ত জনপদের মধ্যে খানিকটা হলেও ঈদের আনন্দ ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস আর সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান ঈদের সবটুকু আলো কেড়ে নিয়ে আঁধার করে দিয়েছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের অংশ হিসেবে নতুন পোশাক কিনতে প্রতি বছরই বিপণীবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতে জমে উঠে ভিড়। বিত্তবান থেকে শুরু করে একেবারে দিনমজুর একটি হলেও নতুন পোশাক কেনেন। কিন্তু এবার ঈদের কেনাকাটা ক্রেতাশূন্যতায় ভুগছে।
নানা শর্ত দিয়ে গত ১০ মে থেকে খুলেছে কিছু বিপণিবিতান। এগুলোতে কিছুটা ভিড় থাকলেও, ফুটপাতের দোকান খাঁ খাঁ করছে। বিক্রেতারা বলছেন, পেটের ক্ষুধা না মিটলে গরিব মানুষেরা কী করে নতুন পোশাক কিনবেন?
ঈদকে উপলক্ষ করে প্রতি বছর কোটি মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যান পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনে। অধিক টাকায় টিকিট কিনে অসহনীয় যানজট পেরিয়ে প্রিয়জনের কাছে তাদের এ ছুটে যাওয়া এবার আর হচ্ছে না। করোনার সংক্রমণ এড়াতে গত ২৫ মার্চ থেকে সব গণপরিবহন বন্ধ। নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ঈদযাত্রাও। তবে শেষ মুর্হুতে শুক্রবার (২২ মে) মধ্যরাত থেকে ব্যক্তিগত বাহনে শহর ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেশিরভাগ মানুষ যাচ্ছেন না করোনা থেকে বাঁচতে। অনেকে আবার যাচ্ছেন না, বেতন-বোনাস না পাওয়ায়।
জীবন চলে জীবনের নিয়মে- এ কারণে ঈদের অনেক অনুষঙ্গ পালিত হবে। মানুষ একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাবেন। বাণী আসবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। কিন্তু বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদের দিনের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় থাকছে না। ঈদের সময় রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান দেশে থাকলে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন কখনও বাতিল হয়নি।
এবারের ঈদের শুরুটাও হবে ভিন্নভাবে। দেশের কোনো ঈদগাহে এবার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। মসজিদে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামাত করার পরামর্শ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল সাতটায়। পরের জামাতগুলো হবে সকাল আটটা, নয়টা, দশটা এবং পৌনে ১১টায়। তবে ঈদ জামাতের পর কোলাকুলি করা যাবে না, হাত মেলানো যাবে না।
ঈদে শহরে থেকে যাওয়া মানুষদের আনন্দের জন্য প্রতি বছরই নতুন করে সাজে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কের মতো বিনোদনকেন্দ্রগুলো। যাতে ঈদের দিন থেকে টানা এক সপ্তাহ ভিড় জমান লাখো মানুষ। তবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এবার সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভাটা পড়েছে টেলিভিশন চ্যানেলের ঈদ অনুষ্ঠানমালাতেও। করোনার কারণে নাটকের শুটিং বন্ধ থাকায় সীমিত পরিসরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে থাকবে ঈদের আয়োজন। আর প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ থাকায় ঈদ উপলক্ষে নতুন কোনো চলচ্চিত্র তো নয়ই, পুরনো কোনো চলচ্চিত্র দেখা যাবে না।
এত সব ‘না’-এর মধ্যে ঈদ আসছে। এ ঈদে ধর্মপ্রাণ মুসলমান কায়মনে প্রার্থনা করবে- দূর হোক করোনা। সবাই সবার পাশে দাঁড়িয়ে নতুন এক সময় তৈরি করতে হবে। যাতে সামনের ঈদগুলো হয় আনন্দের, খুশির।
তবুও সুখের হউক সবার ঈদ সেই প্রত্যাশাই করি।
Leave a Reply