রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে, চেকপোস্টর বিকল্প রাস্তা পার করে দিচ্ছেন স্থানীয় একটি দালাল চক্র।
শরণার্থী হিসাবে আশ্রিত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিয়ে দেশে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এরা শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে বিদেশ ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। জড়াচ্ছে শিশু চুরিসহ নানা সামাজিক অপরাধে। তারা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের ঘিরে এক শ্রেণির দালাল গোষ্ঠীও গজিয়ে উঠেছে। তারা বাংলাদেশের জাল পাসপোর্ট তৈরি, নাগরিকত্ব প্রদান, বিদেশে বৈধ বা অবৈধভাবে পাচার করা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্যাম্পের দায়িত্বরত এক গোয়েন্দা কাছে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গারা আস্তে আস্তে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব রোহিঙ্গা ও দালালদের যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে। কোন ধরনের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি করতে দেওয়া হবে না।
এদের পিছনে কারা কাজ করছে তার অনুসন্ধান চলছে তিনি আরো বলেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থাইংখালি বাজারের সামনে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টের বিকল্প রাস্তা দিয়ে একটি থাইংখালির পন্ডিত পাড়ার গফুর প্রকাশ কসাই গফুর নেতৃত্ব দালাল চক্র টাকার বিনিময়ে পার করে দিচ্ছে বিভিন্ন স্থানে, সরকার রোহিঙ্গাদের উপর কঠোর নজর রাখছে বলেও তিনি দাবি করেন।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার সময় সরকারের পক্ষ থেকে হোটেল, রাস্তা, যানবাহনে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও তল্লাশির ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা অনেকটাই শিথিল। এ সুযোগে এই দালাল গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের নিয়ে বৈধ-অবৈধ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে।
ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা:কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়া এসব রোহিঙ্গারা প্রতিদিন ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছেন। ইদানীং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা আটকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কাজের খোঁজ ছাড়াও শরণার্থী শিবিরের মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেতে ও ধনী হওয়ার আশায় স্থানীয় দালাল চক্রের সহযোগিতায় বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছায় অনেক রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে যাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গারা মাঝেমধ্যে আটক হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দালালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গারা যাতে দেশের মূল জনস্রোতে মিশে যেতে না পারে সেজন্য টেকনাফ থেকে উখিয়া পর্যন্ত বসানো হয়েছে বেশ কয়েকটি চেকপোস্ট। পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এসব চেকপোস্টে তল্লাশি চালান। তবে এত সতর্কতার পরও রোহিঙ্গারা বিকল্প রাস্তা দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য এলাকায়। জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন পেশায়। উখিয়ার ফলিয়া পাড়া সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ভোরে রোহিঙ্গাদের কাজের সন্ধানে বের হতে দেখা যায়। স্থানীয় দোকানিরা জানান, রোহিঙ্গারা আসার পর বোরকার বিক্রি বেড়ে গেছে। ক্যাম্পের নারীরা বোরকা পড়েন। বোরকা পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাওয়ার সুবিধা আছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহীতে বোরকা পরে পাসপোর্ট করতে গিয়ে দালালসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন এক রোহিঙ্গা তরুণী। বছর খানেক আগে ঢাকার সূত্রাপুর থানার পুলিশ একটি হোটেল থেকে ৫/৬ জন রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করে।
এদিকে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় রোহিঙ্গা আর ছেলে ধরা আতঙ্ক দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই জেলার কোন না কোন স্থানে ছেলে ধরা (শিশু চোর) রোহিঙ্গা সন্দেহে এলাকাবাসীর গণপিটুনি বা লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন এ দেশেরই বয়স্ক ভিক্ষুক ও মানসিক রোগীরা। ইতোমধ্যে ছেলে ধরা সন্দেহে ডুমুরিয়া উপজেলায় গণপিটুনিতে ষাটোর্ধ্ব এক রোহিঙ্গা বৃেদ্ধর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্ট এড়িয়ে পাহাড়-জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারা এখন লোকাল ভাষা শিখে গেছে। পোশাক লোকালদের মতো পড়ছে। চেকপোস্ট দিয়ে দুই-চারজন যারা আসছে তারা স্পষ্টভাবে জায়গার নাম বলছে।
সূত্রমতে, সাধারণভাবে ধরা পড়লে ক্যাম্পে ফেরত্ পাঠানো হলেও ইয়াবা নিয়ে ধরা পড়লেই শুধু রোহিঙ্গাদের জেল হাজতে পাঠানো হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যেসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে গত বছরের জুন থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে জাতিসংঘ। এপর্যন্ত আড়াই লক্ষ রোহিঙ্গাকে পরিচয়পত্র দিয়েছে সংস্থাটি। বাকিদের পরিচয়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply