ঢাকঢোল পিটিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য আজ বুধবার পূর্ব বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেলা আয়োজকরা। সরগরম হয়ে উঠেছে মেলার আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আত্বীয় স্বজন। সম্পন্ন করেছে প্রতিটি ঘরে ঘরে মুড়ি ভাঁজার। বগুড়া জেলা গাবতলি উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের অর্ন্তগত গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ন ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি বসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আত্বীয়স্বজন এসে সমবেত হয়। ঈদ বা কোন উৎসবে জামাই-মেয়েসহ অন্যান্য আত্বীয়স্বজনদের দাওয়াত না দিলেও তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে, যা রেওয়াজে পরিনীত হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার প্রতিটি বাড়ীতে আত্বীয় স্বজন এসেছে। যা মেলার কয়েক দিন পর্যন্ত আত্বীয় স্বজনের ধুমধাম চলবে। মেলাটি একদিনের জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলার আমেজ থাকে সপ্তাহ ব্যাপী। এই মেলাকে ঘিরে উপজেলার দুর্গাহাটা, বাইগুনি, সুবোধ বাজার এবং দাড়াইল বাজারসহ কয়েকটিস্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানো হয়। ওই স্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানোর কারনে চরম হুমকির মূখে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলাটি। পোড়াদহ মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা স্টীলের ফার্নিনচার, বড়ই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের ন্যায় কেনা-বেচা করা হয়। এ ছাড়া বিনোদনমূলক সার্কাস, মোটর সাইকেল-কার, নৌকা খেলা ও নাগোরদোলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মন্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেয়া হয়। যে কারনে মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম মেলাটির নেতৃত্বে রয়েছেন। বাংলার প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। কিছু সমস্যার কারনে গত ২/৩ বছর হলে মূল জায়গা থেকে একটু দুরে মেলাটি বসানো হয়। মেলাটি আজ বুধবার হলেও কয়েক দিন আগে থেকে দোকান ঘর স্থাপন করা হয়েছে। তৈরী করা হয়েছে হাজার হাজার মণ মিষ্টি। যা কয়েক দিন আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা মিষ্টি বিক্রয় করেছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম জানান ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রওনক জাহান জানান ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষে প্রশাসনের সার্বিকভাবে সহযোগিতা রয়েছে। এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুজ্জামান জানান প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পোড়াদহ মেলায় আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। তবে মেলায় অবৈধ কোন কিছু করতে দেয়া হবে না। অপর দিকে আজ বুধবার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা শেষ হলে আগামী কাল বৃহস্পতিবার বউ মেলা বসানো হবে। বউ মেলাটি ২টি স্থানে যথা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে মহিষাবান গ্রামে এবং যুবলীগ নেতা সুলতান মাহমুদ এর নেতৃত্বে রানিরপাড়া গ্রামে বউ মেলা বসানো হবে বলে জানা গেছে। এ দিকে গত মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সরে জমিনে পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রফি নেওয়াজ খাঁন রবিন, বগুড়া সড়ক ও জনপদ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রওনক জাহান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গাবতলী সার্কেল) সাবিনা ইয়াসমীন, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুজ্জামান, ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন।
Leave a Reply