চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূসহ দুই নারীর মৃত্যু
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার স্কয়ার হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় আসমা আক্তার মিমি (২৩) ও হাসপাতালের সাবেক এমডি মানিক বাবুর মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ১১ ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার গৃহবধূ মিলির টনসেল অপরাশনের সময় তার ক্লিনিক্যালি মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় পুরো চাটখিল ব্যাপি চলছে তোলপাড়। হাসপাতালের এমডিসহ কর্মকর্তারা নারীদের মৃত্যুর ঘটনায় গা ডাকা দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আসমা আক্তার মিমি, স্বামী মোঃ সেলিম, ঠিকানা রুদ্ররামপুর (উত্তর হাজী বাড়ি) থানা চাটখিল। সেলিম ও মিমি দম্পতির আড়াই বছরের মিনহাজ নামের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় জীবন হারালো মিমি আর মা হারালো শিশু মিনহাজ।
মিমি গলায় টনসেল জনিত সমস্যায় ছিল। গত ৪ ফেব্রুয়ারি চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। হাসপাতালে সাপ্তাহিক নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আসাদুজ্জামান মিলিকে দেখে, ১১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার অপারেশনের তারিখ নির্ধারণ করে।
পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ১১ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার মিমিকে চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়। বিকেল ৫টার কয়েক মিনিট পূর্বে আসমা আক্তার মিমিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাঃ আসাদুজ্জামান মিলির টনসেল অপারেশন করেন।
এক ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে মিমিকে বের করে ৩০৩ নং কেবিনে নেওয়া হয়।
কেবিনের নেওয়ার পর মিমি অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় পড়ে ছিল। এই সময় তার স্বামী সেলিম দেখতে পায়, মিমির নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের জানানো হয়। পুনরায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। ২য় বার প্রায় আড়াই ঘন্টা অপারেশন থিয়েটারে রাখা হয়।
হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, অপারেশন থিয়েটারে মিমির ক্লিনিক্যাল মৃত্যু হয়। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে, হাসপাতাল থেকে একটা
এ্যাম্বুলেন্স আনা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় ঢাকার পথে এ্যাম্বুলেন্সকে। এ সময় অপারেশন থিয়েটারে সেলিমকে ডেকে নেওয়া হয়। বলা হয় আপনার স্ত্রীর অক্সিজেন প্রয়োজন। তাছাড়া তাকে আইসিইউতে রাখতে হবে। আপনাদের কোন চিন্তা নেই। ঢাকার প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আমরা সব ব্যবস্থা করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে তাদেরকে স্কয়ার হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
রাত ১২ টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ের প্রো এক্টিভেট হাসপাতালে আনার পর, এখানে কর্তব্যরত ডাক্তারেরা জানান মিমির অবস্থা ভালো নয়। যা ঘটার তা স্কয়ার হাসপাতালেই ঘটেছে। স্কয়ার হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে আইসিওতে রাখার জন্য।
স্কয়ার হাসপাতালেই মিমির মৃত্যু হয়েছে। নিজেদের রক্ষার জন্য পরবর্তীতে বিভিন্ন নাটকীয়তার আশ্রয় নেওয়া হয়।
অবশেষে রোববার ভোরে মিমিকে মৃত ঘোষণা করে প্রো একটিভ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূ মিমি ও মানিক বাবুর মায়ের মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাক আহমেদ বলেন,মানিক বাবুর মায়ের মৃত্যুর ঘটনাটা আমি শুনেছি। গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা এখনই জানতে পারলাম। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।
এ বিষয়ে জানার জন্য নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মাসুম ইফতেখারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি একটি মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নারীদের মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, চিকিৎসার নামে হাসপাতালগুলোতে এগুলো কি হচ্ছে? চিকিৎসার নামে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা অত্যান্ত দুঃখ জনক। তিনি বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।
Leave a Reply