মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন

খরার উচ্চ ঝুঁকিতে রাজশাহীসহ ৬ জেলা

রিপোর্টারঃমোঃসুজন আহাম্মেদ রাজ 
  • আপডেট টাইম বুধবার, ২ মার্চ, ২০২২

খরার উচ্চ ঝুঁকিতে রাজশাহীসহ ৬ জেলা

 

রিপোর্টারঃমোঃসুজন আহাম্মেদ রাজ

 

পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশের জলবায়ুর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো খরা। মূলত দীর্ঘ সময় ধরে চলা শুষ্ক আবহাওয়া, অপর্যাপ্ত বৃষ্টি, বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীভবন ও প্রস্বেদনের পরিমাণ বেশি হলে খরার সৃষ্টি হয়। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দেখা দেয় পানির অভাব। কুয়া, খাল, বিলের মতো নিত্যব্যবহার্য পানির আধার শুকিয়ে যায়।

 

গত কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে সবচেয়ে বড় খরা মোকাবেলা করেছে। খরার কারণে সে সময় দেশের প্রায় ৪২ শতাংশ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে খরার কারণে কৃষিতে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি মোকাবেলা করতে হয় বাংলাদেশকে। এত বছর পর এসেই প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের ঝুঁকি এখনো কমেনি। দেশের প্রায় ২২টি জেলা খরার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে খুবই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ছয় জেলা। এগুলো হল- রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও।

 

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক অ্যাটলাস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দুটি খণ্ডে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও দুর্যোগ ঝুঁকি চিহ্নিত করা এ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি অবকাঠামো পরিকল্পনা, নকশা ও কৌশল প্রণয়ন, বিপদ প্রশমনে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবেলায় একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে এ অ্যাটলাস।

 

এছাড়া কৃষিতে টেকসই জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উন্নয়ন প্রচার করা, স্টেকহোল্ডারদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের পানি সম্পদ খাত জলবায়ু এবং দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলায় তাদের নির্দেশনা দেয়াও হবে এর লক্ষ্য।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের খরাপ্রবণ জেলাগুলোয় মোট জমি রয়েছে প্রায় ৫৪ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। খরাপ্রবণ এসব এলাকা মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এর মধ্যে খরাপ্রবণ জেলা ১৩টি, খরা ও বন্যাপ্রবণ জেলা ছয়টি, খরা ও আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে তিনটি জেলা। নওগাঁ, রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও এই ছয়টি জেলা খুবই উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

খরার মূল কারণ দেরিতে বৃষ্টি হওয়া কিংবা মৌসুমি বৃষ্টি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া। এ ধরনের খরা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল ১৯৭৮ ও ১৯৭৯ সালে। সে সময় দেশের প্রায় ৪২ শতাংশ আবাদি জমি সরাসরি ক্ষতির শিকার হয়েছিল। যার কারণে চালের উৎপাদন কমে গিয়েছিল প্রায় ২০ লাখ টন। একইভাবে ১৯৯৭ সালে খরার কারণে ১০ লাখ টন ধান ক্ষতির শিকার হয়। যার মধ্যে ছয় লাখ টন ছিল রোপা আমন। সব মিলিয়ে কৃষিতে এ ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ কোটি ডলার।

 

খরার ঝুঁকিতে থাকা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এছাড়া খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা এবং ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলাও রয়েছে খরার ঝুঁকিতে। খরার সঙ্গে বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও কুষ্টিয়া। খরার সঙ্গে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। অর্থাৎ খরার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করছে দেশের এ ২২ জেলা।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট নানা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। খরার পাশাপাশি শুধু ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে তিনটি জেলা, বন্যার ঝুঁকিতে নয়টি, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে ছয়টি, বন্যা ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ছয়টি জেলা। অন্যদিকে লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা জেলার সংখ্যা ১৬টি।

 

বাংলাদেশের একটি বিশাল এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও মেঘনা নদীর মোহনা। ১৯৯২ ও ১৯৯৮ সালে বন্যার সময় দেশের অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চল প্লাবিত হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৪ জেলার তিন লাখ হেক্টরের বেশি জমি। ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। ফলে দেখা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটিই কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

বাংলাদেশ বিশ্বের বৃৃহত্তম ব-দ্বীপ হিসেবে বিবেচিত। ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনা নদী হলো পানির প্রধান নিষ্কাশন ব্যবস্থা। নদীমাতৃক দেশটি উচ্চতর জলবায়ুু এবং আবহাওয়া সম্পর্কিত এবং ভূ-ভৌতিক ও ভূ-সংস্থানের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের ভূ-সংস্থানকে নিম্ন ও সমতল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ছয় মিটারের কম উচ্চতা রয়েছে।

 

বাংলাদেশের ঝুঁকিগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে জলবায়ুু সংক্রান্ত বিপদ ও ঝুঁকিগুলো হলো- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, শৈত্যপ্রবাহ, লবণাক্ততা ও নদী ক্ষয়। ভূ-ভৌতিক বিপদ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্প ও ভূমিধস। বাংলাদেশের ভূ-তাত্ত্বিক বিন্যাসের কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মৌসুমি জলবায়ু বিস্তৃত। বৃষ্টিপাতের ঋতুগত তারতম্য, উচ্চতাপমাত্রা এবং উচ্চআর্দ্রতা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বর্ধিত তাপমাত্রার সম্মুখীন হচ্ছে, অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ধরন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ত্বরান্বিত হওয়ার কারণে বিপর্যয় আরো তীব্র হচ্ছে।

০১ মার্চ ৩০২২ইং

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581