বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

৩৬ ঘন্টার মধ্যে ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন, শ্বশুর সহ ০৩ (তিন) জন গ্রেফতার।

ইমাম হোসেন হিমেল।
  • আপডেট টাইম রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০

গত ইং ২২ অক্টোবর ২০২০ খ্রিঃ অনুমান ১২:৩০ ঘটিকায় কলাপাড়া থানায় একটি সংবাদ আসে যে, লালুয়া ইউনিয়ানের নাওয়াপাড়া গ্রামের জনৈক আমিনুল ইসলাম গাজী @ দীলিপ গাজী (৫০) পিতা-মৃত দৌলত হোসেন গাজী এর নিজ বসত ঘরে বিছানার উপর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে কলাপাড়া থানা পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পটুয়াখালী প্রেরণ করে এবং মৃতের স্ত্রী হাবিবা বেগম এর এজাহারের ভিত্তিতে কলাপাড়া থানার মামলা নং-২৭, তারিখ ২২-১০-২০২০ খ্রিঃ, ধারা-৪৫৭/৩০২/৩৪ পিসি রুজু হয়।

উক্ত ঘটনার পর থেকে পটুয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মইনুল হাসান পিপিএম এর সার্বিক তদারকি ও নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) জনাব শেখ বিল্লাল হোসেন এর নেতৃত্বে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের নিমিত্তে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ শুরু করে। তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে গতকাল ২৪-১০-২০২০ খ্রিঃ অনুমান ১৩:০০ ঘটিকায় বরগুনা জেলার সদর থানাধীন হেউলিবুনিয়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে মোঃ আমজেদ (৫৫) পিতা-মৃত মোঃ ছাহেদালি কে গ্রেফতার করা হয়। তার তথ্য মতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ২৪-১০-২০২০ খ্রিঃ অনুমান ২১:১৫ ঘটিকায় আমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নিজাম @ মিজান (৪৫) পিতা-ফজলে করিম, সাং-গুলিশাখালী, থানা-আমতলী জেলা-বরগুনাকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ তাদের দেয়া তথ্য মতে পটুয়াখালী পৌরসভাস্থ ছোট চৌরাস্তা থেকে ২৫-১০-২০২০ খ্রিঃ ০৩:৩০ ঘটিকায় মোঃ আনোয়ার হোসেন প্যাদা (৫৫) (ভিকটিমের শ্বশুর) পিতা-মৃত হাতেম আলী প্যাদা, সাং-মাছুয়াখালী (ইউপি-ধানখালী) থানা-কলাপাড়া, জেলা-পটুয়াখালীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম আমিনুল ইসলাম গাজী @ দীলিপ গাজী গ্রেফতারকৃত আনোয়ার প্যাদার কন্যা হাবিবা বেগমকে বিবাহ করে। তাদের ঘরে ০২ (দুই) কন্যা ও ০১ (এক) পুত্র রয়েছে। ভিকটিম একজন সাবেক ইউপি সদস্য এবং তিনি দীর্ঘদিন কাতারে ছিলেন। তিনি অত্যন্ত মিতব্যয়ী একজন মানুষ। তিনি পৈত্রিক সূত্রে অনেক জমিজমা পেয়েছেন। কিছু জমি পায়রা বন্দর কর্তৃক অধিগ্রহন হওয়ায় ক্ষতিপূরণ বাবদ বড় অংকের টাকা পেয়েছেন। তিনি শ্বশুরের সাথে যৌথভাবে কিছু জমি কিনেছিলেন যা অধিগ্রহন হওয়ার পর শ্বশুর নিজেই সকল টাকা উত্তোলন করে নেয়। এ বিষয় নিয়ে শ্বশুরের সাথে তার মনোমালিন্য হয়। স্ত্রী এবং মানসিক ভাবে অসুস্থ্য বড় মেয়ের চিকিৎসার খরচ না দেয়ার কারনে পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত ঈদ-উল-আযহার পর স্ত্রী ০৩(তিন) সন্তানকে নিয়ে কলাপাড়া থানার ধানখালী ইউনিয়নে বাপের বাড়ি চলে যান। ভিকটিমে ব্যাংক হিসাবের নমিনী বড় মেয়ে বলে জানা যায়।

ভিকটিমের শ্বশুর আনোয়ার প্যাদা জমি কেনা-বিক্রির মধ্যস্থতা তথা দালালি করে। সে চিন্তা করে, তার মেয়ে জামাই দীলিপ গাজী মারা গেলে তার ব্যাংকে রক্ষিত অর্থের মালিক হবে তার নাতনি। এছাড়া, যেহেতু দীলিপ গাজী স্ত্রী সন্তানের ভরণ পোষন দিচ্ছেনা তাই সে মারা গেলেও তার কোন ক্ষতি নাই। এক পর্যায়ে শ্বশুর আনোয়ার প্যাদা মেয়ে জামাই দীলিপ গাজীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং ভাড়াটিয়ে খুনি খুজতে থাকে। বিষয়টি তার আপন ভাইয়ের মেয়ে জামাই নিজাম মিজানকে জানায়। নিজামের নামে ডাকাতি সহ বরগুনা জেলার আমতলী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। নিজাম চাচা শ্বশুর আনোয়ার প্যাদার কথায় রাজি হয়ে বরগুনা সদর থানায় আমজেদ এর কথা বলে। আমজেদের সাথে জেল হাজতে বসে নিজামের পরিচয় হয়েছিল। এরপর থেকে তারা একে অপরকে ধর্মের ভাই বলে পরিচয় দেয়। আনোয়ার প্যাদা এবং নিজাম একাধিকবার বিভিন্নস্থানে শলাপরামর্শ করে। আনুমানিক দুই মাস পূর্বে আমতলী ফেরীঘাটে বসে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকার বিনিময়ে নিজাম ও আমজেদ মিলে দীলিপ গাজীকে হত্যা করার বিষয়ে আনোয়ার প্যাদার সাথে চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী আনোয়ার প্যাদা বিভিন্ন সময়ে অল্প অল্প করে নিজামের কাছে ১,৬০,০০০/- (এক লক্ষ ষাট হাজার) টাকা প্রদান করে যা নিজাম ও আমজেদ মিলে ভাগ করে নেয়। টাকা নিয়েও কাজ না করায় আনোয়ার প্যাদা তাদের দুইজনকে চাপ দিতে থাকে।

ঘটনার দিন গত ২১-১০-২০২০ খ্রিঃ আমজেদ ছয়টি ঘুমের বড়ি কিনে গুড়া করে একটি প্লাস্টিকের ছোট বোতলে ভরে নিয়ে বাড়ি থেকে আমতলীতে এসে ফেরীঘাটে নিজামের সাথে মিলিত হয়। তারা আমতলী থেকে বাস যোগে কলাপাড়ায় আসে। সেখান থেকে অটো রিক্সা যোগে বালিয়াতলী খেয়াঘাটে যায়। খেয়া পার হয়ে তারা বানতি বাজারে যায়। এ পর্যায়ে আমজেদ তার মোবাইল থেকে আনোয়ার প্যাদাকে ফোন করে বাকী টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। তখন আনোয়ার প্যাদা পটুয়াখালী পৌরসভাস্থ কলাতলা বাজারের একটি বিকাশের দোকান থেকে বানতি বাজারের একটি বিকাশের দোকানে ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকা পাঠায়। টাকা তুলে নিজাম ভিকটিমকে ফোন করে বলে, ভাই আমি তোমার বাড়ি আসছি। আমজেদ সেখান থেকে এক লিটার সেভেনআপ কিনে নেয়।

নিজাম ও আমজেদ বানতি বাজার থেকে পায়ে হেটে ভিকটিমের বাড়িতে গেলে ভিকটিম পিছনের দরজা খুলে দেয়। দুইজন ভিতরে প্রবেশ করে ভিকটিমের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে নিজাম গোপনে সেভেনআপের বোতলে ঘুমের ট্যাবলেটের গুড়া মিশিয়ে কৌশলে ভিকটিমকে খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর ভিকটিম ঘুমিয়ে গেলে নিজাম বিছানায় থাকা একটি পাতলা কাঁথা দিয়ে ভিকটিমের নাখ, মুখ ও গলা চেপে ধরে। আমজেদ ভিকটিমের পা চেপে ধরে রাখে। কিছুক্ষণ পর ভিকটিম মারা যায়। ওই রাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। বৃষ্টির কারনে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারা ঘর থেকে বের হয়ে উত্তর লালুয়া- চিংগুড়িয়া খেয়াঘাট পার হয়। এ সময় আমজেদ পূনরায় ভিকটিমের শ্বশুর আনোয়ার প্যাদাকে ফোন করে বাকী ত্রিশ হাজার টাকা চাইলে আনোয়ার প্যাদা তাদেরকে আমতলী আসতে বললে তারা আমতলী চলে আসে। আনোয়ার প্যাদা ২০,০০০/-(বিশ হাজার) টাকা নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে পটুয়াখালী থেকে আমতলী এসে তাদের কাছে টাকা হস্তান্তর করে। নিজাম ও আমজেদ টাকা ভাগ করে নিয়ে যে যার গন্তব্যে চলে যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581