মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

হাজার টাকা নিয়ে ৫২ টাকার রসিদ দিলেন ভূমি কর্মকর্তা! ? Matrijagat TV

শামসুর রহমান নিরব স্টাফ রিপোর্টার যশোর:
  • আপডেট টাইম মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

যশোরের মণিরামপুরের গাঙ্গুলিয়া গ্রামের কানাই কর্মকার। লোহা পিটিয়ে সংসার চলে তার। বাবা চন্ডি চরণ কর্মকারের সূত্রে পাওয়া ১১ শতক ধানী জমি বিক্রি করবেন তিনি।

জমি বিক্রি করতে গেলে জমির খাজনা পরিশোধের রশিদ লাগে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। সেই জন্য গত ২২ জানুয়ারি জমির দাখিলা কাটতে সংশ্লিষ্ট রোহিতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যান তিনি।

অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা গোলাম রসুল ছয় হাজার টাকা দাবি করে বসেন। অবশেষে নায়েবকে দুই হাজার টাকা দিয়ে দাখিলা কাটান তিনি। নায়েব টাকা নিয়ে তাকে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদ দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু রসিদে তিনি দুই হাজার টাকা উল্লেখ করেননি। করেছেন মাত্র ৫২ টাকা। রোহিতা ইউনিয়নের বাগডোব গ্রামের আতিয়ার রহমান মা সায়েরা বেগম ও খালা আনোয়ারা বেগমের দুই শতক ধানী জমি বিক্রয় করার উদ্দেশে গত ১২ জানুয়ারি ওই ভূমি কর্মকর্তার কাছে যান। তিনি আতিয়ারের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে মাত্র ১০ টাকার রসিদ দিয়েছেন। সরেজমিন এই প্রতিবেদকের কাছে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কানাই ও আতিয়ার। যার ভিডিও স্বাক্ষাতকার রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিন গাঙ্গুলিয়া আমতলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায় হাতুড়ি দিয়ে গরম লোহা পিটিয়ে সোজা করছেন কানাই কর্মকার। এসময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ধানী ১১ শতক জমি বেচার জন্য দাখিলা কাটতে যাই রোহিতা ভূমি অফিসে। নায়েব গোলাম রসুল দাখিলার রসিদ নেই বলে ১৫-২০ দিন ঘোরায়।

পরে একদিন ছয় হাজার টাকা দাবি করে। আমি দুই হাজার টাকা দিয়ে রসিদ দিতে বলি। তিনি রসিদ দেন। পরে বাড়ি এসে দেখি রসিদে ৫২ টাকা উল্লেখ করা। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের সাথে এরাম করলি হবে কি করে-প্রশ্ন কানাই কর্মকারের। আতিয়ার রহমান বলেন, নানীর সূত্রে মা ও খালা দুই শতক জমি পাইল। তা বিক্রি করার জন্য দাখিলা কাটতি হবে। নায়েব অফিসি গিলি সে এক হাজার টাকা নিইল। আর রসিদ দেছে ১০ টাকার। শুধু কানাই বা আতিয়ার নয় নায়েব গোলাম রসুলের হাতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য সাধারণ মানুষ সেবার নামে প্রতারিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা জানান, নায়েব নিজেই সেবা নিতে আসা লোকজনের কাছে মোটা অংকের টাকা চায়। টাকা দিতে না পারলে তাদের ফোন নম্বর রেখে দেন তিনি। পরে তাদের ফোনে ডেকে এনে বন্ধের দিনে কাজ করে দেন।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও প্রতি শনিবার তিনি একা অফিসে এসে এসব কাজ করেন। স্থানীয় দুই-তিনজন দালালের মাধ্যমে তিনি একাজ করেন বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা নায়েব গোলাম রসুলের শাস্তি দাবি করছেন। রোহিতা ইউনিয়নের পট্টি-স্বরণপুর ওয়ার্ডের মেম্বর আমিনুর রহমান বলেন, নায়েব গোলাম রসুলের ব্যাপারে এসিল্যান্ডের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন রোহিতা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা গোলাম রসুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যার কাছ থেকে যা নেওয়া হয়েছে, রসিদে তা উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ওই সময় এক ব্যক্তিকে ১৪২ টাকার দাখিলার রসিদ দিয়ে নায়েবকে এক হাজার ৭৪২ টাকা নিতে দেখা গেছে। বিষয়টি জানানো হলে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসান বলেন, এই ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন।

আর ইউএনও আহসান উল্লাহ শরিফীর সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার সরকারি ও তাঁর ব্যক্তিগত নম্বরে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসিফ মাহমুদ বলেন, এই ধরণের কোন অভিযোগ পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট নায়েবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581