স্ত্রীকে হারানোর ভয় নিজের শরীরের সঙ্গে বেঁধে নিয়ে ভিক্ষা করেন নুরা পাগলা
গাইবান্ধা জেলা ব্যুরো প্রধান, রানা ইস্কান্দার রহমান
ভালোবাসা কাকে বলে এই নুরা পাগলা কে দেখে আপনারা শিক্ষা নিন।
প্রায় দেড়দশক আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান নুরা পাগলার প্রথম স্ত্রী হাজেরা। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর শোক মেনে নিতে না পারায় তিনিও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। সেই থেকে হয়ে যান নুরা পাগলা। পাগল হয়ে আবারও সংসার শুরু করবেন বলে দ্বিতীয় বিয়ে। সেটিও টেকেনি। এভাবে এক এক করে আরও ১৯ জন মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে করেন বিয়ে। তাদের মধ্যে ১৭ জনই ছেড়ে চলে গেছেন নুরা পাগলাকে। সেই থেকে স্ত্রীদের হারানোর ভয়ে ১৯তম স্ত্রীকে নিজের শরীরের সঙ্গে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে ভিক্ষা করে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামে।
৭০ বছরের এ নুর ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের ধারাকপুর উত্তরপাড়া গ্রামে। তার ১৯তম স্ত্রীর নাম জান্নাত বেগম। ৩৫ বছর বয়সী জান্নাতও মানসিক প্রতিবন্ধী।
সরেজমিনে জানা গেছে, নুর ইসলামের প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল হাজেরা খাতুন। ওই সংসারে এক ছেলে শেখ চান ও এক মেয়ে মুন্নি আক্তারকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল তাদের। প্রায় ১৫ বছর আগে হাজেরা খাতুন অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেন নুর ইসলাম। কিন্তু কিছুদিন পর স্বামী মারা যাওয়ায় মেয়েটি ফিরে আসেন নুরের কাছে। কয়েক বছর আগে একমাত্র ছেলেও মারা যান।
স্থানীয়রা জানান, প্রথম স্ত্রী হাজেরা খাতুন মারা যাওয়ার পর মানসিক প্রতিবন্ধী বেশ কয়েকজন নারীকে বিয়ে করেন নুর ইসলাম। কিন্তু তারা কেউই তার সঙ্গে সংসার করেননি। বছরখানেক আগে ফুলপুর পৌরসভার আমুয়াকান্দা বাজারে জান্নাত নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধীর সঙ্গে সংসার শুরু করেন নুর ইসলাম। এর পর থেকে জান্নাতকে ‘হারানোর ভয়ে’ সব সময় শিকল কিংবা রশি দিয়ে কোমরে বেঁধে ভিক্ষা করেন নুর।
নুর ইসলামের ভাবী রাশিদা বলেন, জান্নাতের সঙ্গে নুর ইসলামের পরিচয় হয় বছরখানেক আগে। পরে জান্নাতকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলে এলাকার লোকজন দু’জনের মতামত নিয়ে বিয়ে করিয়ে দেন৷
তিনি আরও বলেন, নিজের দুই শতাংশ জমির পাশে একটি ছাপড়া ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন নুর ইসলাম। কলাপাতা, সুপারিপাতা, ছেঁড়া কাপড়, বস্তা ও কুড়িনো পলিথিন দিয়ে ঘরটি তৈরি করেছে নুর। মানসিক কিছু সমস্যা থাকলেও জান্নাত ঠান্ডা প্রকৃতির। তিনি রান্নাসহ স্বামীর সেবাযত্ন করেন।
Leave a Reply