সুস্থতার ব্যাপারে ইসলামের ভুমিকা ও বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করনীয়
ইসলামে আত্মার প্রশান্তির পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতাকে অতিগুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে।সুস্থতা আল্লাহর প্রদত্ত এক মহা নিয়ামত। এ নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কয়জনে করি!
নবীজি সা. এশরাদ
করেছেন,আমার উম্মতের
অধিকাংশ নর নারী দু’টি নেয়ামতকে হেলাফেলা করে,তেমন গুরুত্ব দেয়না!
১. সুস্থতা ২.অবসর সময়।
বোখারী শরীফ।
অন্যত্রে নবীজি সা: বলেন, তোমার ওপর তোমার শরীরের হক্ব আছে। প্রকাশ থাকে যে, রোগের নিরাময় নিহীত বেশ কয়েকটা জিনিসের মাঝে।যথাক্রমে, দোয়া, দাওয়া,এবং বেঁচে থাকা ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাপী “করোনাভাইরাস” এক মহা সংকটের নাম। যার প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব এখন অবরুদ্ধ! গৃহবন্দি সবাই।
রাজা থেকে প্রজা পর্যন্ত সব শ্রেণীর মানুষ।
ইমাম পুরোহিত ও ধর্মযাজক কেউ তার অশুভ ছোঁবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা!
এ করুণ মুহুর্তে করুণাময়ের সাহায্য ছাড়া “করোনামুক্তি” দূরহ ব্যাপার।দিন দিন লাশের সারি বাড়ছে। উইরোপ আমেরিকার মতো বিশ্ব মডেলরা প্রতিনিয়ত অপেক্ষার প্রহর গুনছে। ইতিমধ্যে প্রায় সতেরো লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সূত্রে জানা যায়।তার মধ্যে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। চির শান্তির শহর রুম সিটি,স্পেন,যুক্তরাষ্ট্রে লাশের মিছিল এখনো থামেনি।
ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের বসুন্ধরায় প্রতিদিন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং সাথে সাথে প্রাণ হারাচ্ছে!
এবং প্রতিনিয়ত মহা ক্রাইসিসে আমাদের করণীয় কী!?
এবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ খুবই প্রশংসার দাবী রাখে। করোনা সম্পর্কে গত ৮ ই মার্চ জানতে পারলে তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের চেয়ে “জনস্বাস্থ্য ” সবের উর্ধ্বে। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান পরেও করা যাবে। পরপর প্রধানমন্ত্রী সবকিছু নিজেই হ্যান্ডেলিং করেন।
যাইহোক, করোনাভাইরাস কে উপলক্ষ করে বিশেষজ্ঞরা যা বলেছেন তার মেজরটি পার্সেন্ট সত্য ও বেশিরভাগই ইসলামি শরীয়া সমর্থিত। যেমন হোমকোয়ারেন্টাইন,কোয়ারেন্টেইন, আইসোলেশন ইত্যাদি। তাছাড়া মাস্ক পরিধান,ঘনঘন মুখহাত সাবান দিয়ে ধৌত করা সহ কোনোটি ইসলামি শরীয়ার বিরুধী নয়।এ বিষয়ে
বিশ্বনন্দিত আলেমেদ্বীন মাওলানা মুফতি তাকী উসমানি যুগোপযোগী চমৎকার সমাধান দিয়েছেন। এমনকি তিনি এ সংক্রামক মহামারী থেকে সুরক্ষার জন্য সাময়িকভাবে মোসাফাহা, করমর্দন ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জোরপূর্বক অনুরোধ জানিয়েছেন বিশ্ব বাসীর প্রতি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামদের নিয়ে পরপর কয়েকদফা বৈঠক হয়। মুফতিগণ সামাজিক দুরত্বের কথা বিবেচনা করে মসজিদের জামাত ছোট করার তাকিদ দেন।অতপর পাঁচবেলার নামাজে সর্বোচ্চ পাঁচজন,জুমার নামাজে ১০ জন নিয়ে জামাত করার আহবান করেছেন।
আমরা এতকিছু দিকনির্দেশা দেয়ার পরও পুলিশের সাথে ইঁদুর বিড়ালের খেলায় মেতে উঠতেছি!
কোরানে কারীমে আল্লাহ তা’লা বলেন, তোমরা নিজেদের কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা। নবীজি সা. মহামারীতে আক্রান্ত এক লোক বায়য়াত গ্রহন করতে আসলে, অনেকদূর থেকে বায়য়াত করেন।
হযরত ওমর( রা) মহামারীতে আক্রান্ত এমন এলাকার খবর পেয়ে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দে পড়লে এক সাহাবী উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমীরুলমুমিনীন,পশুর রাখাল শুস্ক জমিনে পশু বাঁধে! নাকি সবুজ শ্যামল ক্ষের বিশিষ্ট জমিনে ছড়ায়!? ওমর বলেন ( র) অবশ্য সবুজ ক্ষের বিশিষ্ট জমিনে! অতপর তিনি পুনরায় আপন স্থানে চলে গেলেন সফর বাতিল করে। ওমরের গভর্নর আমর ইবনুল আস রা. একিই কাজ করলেন। অর্থাৎ স্বীয় কাফেলা নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় চলে গেলেন।এবং দলে দলে সেটিং করে দেন। আক্রান্ত রোগী শহীদ হয়ে গেলে কাফেলা নিয়ে ঐ এলাকায় প্রবেশ করেন।
উপরোল্লিখিত বিষয়াদী বিবেচনা করলে এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, অধিকাংশ শরীয়াহ সম্মত। তাছাড়া ফতোয়ার কিতাবে লেখা আছে রাষ্ট্রনায়কের কথা শরীয়ার পরিপন্থী না হলে মানা জরুরী। এমন কি মহিলা নেত্রীও যদি ক্ষমতায় আসীন হন।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
লেখকঃ
মাওনানা মিজানুর রহমান
Leave a Reply