রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন

সুলেখা আক্তার শান্তার, আসবো ফিরে তোমার কাছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০

মোঃ হুমায়ূন কবির, স্টাফ রিপোর্টার: ভালোবেসে বিয়ে করি আমি আর অন্তর। আমাদের দুজনের বোঝাপড়া ছিল খুবই ভালো। আমি কি বলতে চাই অন্তর আমাকে দেখে তা অনুভব করতে পারত। আমিও ওকে দেখে ওর না বলা কথা বুঝতে পারতাম যে ও কি বলতে চায়? আশ্চর্যই বলতে হয় আমাদের দুজনার উপলব্ধির এই ক্ষমতাকে। দুজন দুজনকে বুঝতে পারায় আমাদের দিন চলছিল খুবই ভালো। আমার চাওয়া গুলি কখনোই অপূর্ণ রাখতো না অন্তর। আমার চাওয়া গুলি কখনো ওর কাছে মুখ ফুটে বলতে হতো না। ও নিজে থেকেই পুরনো করত আমার চাহিদাগুলো। আমাদের বিয়ের চার বছর হয় চলছে। প্রতিবছরই আমরা বিবাহ বার্ষিকী পালন করে থাকি। আমাদের বিবাহ বার্ষিকীতে প্রতিবারই পরিচিত আপনজনদের আমন্ত্রণ করে থাকি। এবারও তাই করেছি। বিয়ের চার বছর হল। এখনো কোন সন্তান না থাকায় কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগে। আমরা সন্তান নিচ্ছি না কেন? নানান কথা জিজ্ঞেস করে। আমি মৃদু হাসি দিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাই। কিন্তু অন্তরের মন ভারি হয়ে ওঠে প্রশ্ন শুনে। ওর মন খারাপ হয়। অন্তরের মন কিছুতেই ভালো করতে পারছিল না। ওরও একই প্রশ্ন, কেন আমরা সন্তান নিচ্ছি না? ওর প্রশ্ন শুনে আমি অবাক!

বাচ্চা না হওয়াতে কার সমস্যা ছিল আমাদের দুজনেরই জানা ছিল না। অন্তরকে শান্ত করার জন্য বলি, ঠিক আছে। অন্তর আমরা একটা কাজ করতে পারি দুইজনে ডাক্তারের কাছে যাই। অন্তর বললো, ডাক্তারের কাছে যাব কেন? না না আমি ডাক্তারের কাছে যাব না অন্তরা। অন্তর আগের মত হাসে না কথা বলে না। এখন ও যেন আর ওর মধ্যে নেই। মুখ সব সময় গম্ভীর করে রাখে। কিন্তু একপর্যায়ে অন্তরকে ডাক্তারের কাছে আনতে সক্ষম হলাম।

ডাক্তার আমাদের দুজনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলল, জনাব অন্তর জনাবা অন্তরা আপনাদের দু’জনকেই বলছি, সমস্যা হচ্ছে জনাব অন্তরের। অন্তরার কোন সমস্যা নেই।
অন্তর ডাক্তারের কথা শুনে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল। সব পুরুষের কাছেই এটি একটি আত্মমর্যাদার প্রশ্ন। কিছুতেই সে তার সমস্যা মানতে রাজি না। রাগে দুঃখে অপমানে নিজেকে নিজেই ভেঙেচুরে ফেলতে ইচ্ছা করছিল তার। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সে। আমরা বাসায় ফিরে আসি।

অন্তর অবাক করে দিয়ে বলে ওঠে, আমি বিয়ে করবো।
এমন পরিস্থিতি একটা মেয়ের জীবনে মর্মান্তিক। কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না যে বিয়ের কথা অন্তর বলতে পারে। মনে হল আমি ভুল শুনতে পেয়েছি। অন্তর তুমি কি বললে, আবার বলো?

একই কথা বলে সে, আমি বিয়ে করবো?
আমার কানে একি আওয়াজ এলো। আমি অন্তরকে সান্তনা দিতে চেষ্টা করি তুমি ধৈর্য হারা হইওনা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। অন্তর বলে, ডাক্তারের ধারণাকে আমি ভুল প্রমাণ করে দেবো। তোমার এই ভুল প্রমাণে আমাদের দুজনের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। অন্তর বলে, বাস্তব যখন সামনে এসে দাঁড়ায় ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়। আমি বিয়ে করবো তুমি আমাকে পারমিশন দাও?
আমার সমস্ত সত্ত্বা যেন ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে যায়। অন্তর তুমি বিয়ে করবে আমার কাছে পারমিশন চাচ্ছ? একটা মেয়ের জীবনে এর চেয়ে নিষ্ঠুর আর নির্মম কোন বিষয় আছে কি? আমার ভালোবাসা তুমি দেখতে পাচ্ছো না?
অন্তর আমাকে বলে, তুমি বিয়ের পারমিশন দিলে তোমার সম্মানটা আমার কাছে থাকবে। আর না হয়।
আর না হয় বলো? থামলে কেন?
আমি বিয়ে করবো, এই সিদ্ধান্ত বদলাবো না।
আমি সবকিছু ভেবে দেখলাম সন্তানের জন্য আমার স্বামী পাগল হয়ে যাচ্ছে। স্বামীর কথা ভেবেই আমি দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিলাম।

আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে রানীকে ঘরে তুলল। এত দিনের ভালবাসা সংসার সব যেন অর্থহীন হয়ে গেল। এক বারও আমার কথা ভাবলো না অন্তর। ও দেখতে পেল না আমার ভালোবাসা। মেনে নিলাম স্বামী সুখ। কিন্তু রানী কিছুতেই আমাকে সহ্য করতে পারছে না। আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও রানী কিছুতেই আমাকে মানতে পারেনা। রানী অন্তরের কাছে আমার নামে নানা বিষয় মিথ্যা কথা বানিয়ে বলে, অন্তর তা শুনে আমাকে বকাঝকা মারধোর করে। কখনো জানতে চায় না কথাগুলো সত্যি কি মিথ্যা। আমার জন্য অন্তরে হৃদয়ে ভালোবাসা তো দূরের কথা একটু দয়া মায়াও বোধহয় অবশিষ্ট নাই। যে অন্তর একদিন আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না আজ আমি তার কাছে দুচোখের কাটা। আমার স্বামীর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ থাকার কারণে সব অত্যাচার আমি নীরবে মেনে নিতে থাকি।
এক পর্যায়ে রানী ওর সিদ্ধান্ত জানালো, এই বাড়ি থেকে তোমার চলে যেতে হবে।

রানীর এমন কথা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি কিছুতেই যাব না। যদি যেতেই হয় মৃত্যুর পর, লাশ হয়ে এ বাড়ি থেকে যাব। রানী অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বাড়াতে থাকে আমাকে এত অত্যাচার করার পরও আমি বাড়ি থেকে বাহির হইনি। ইদানিং রানী আমার গায়ে হাত তুলে। তা কখনো অন্তরের চোখে পড়ে না। আমাকে হাত ধরে টেনে বলে, তুই এই বাড়ি থেকে বের হবি।

আমি কেন বের হবো? এটা যেমন তোর স্বামীর বাড়ি তেমন এটা আমারও স্বামীর বাড়ি। আমি এই বাড়িতে তোর আগে এসেছি। রানী মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, আহারে আমার স্বামী সোহাগী। আবার স্বামী স্বামী করো? যে স্বামী তোমাকে রেখে আমাকে বিয়ে করেছে? তোমার কোনো খোঁজ খবর নেন না সে।

আমার মুখে কোন কথা আসে না। আমি কি বা বলবো, যাকে নিয়ে বড়াই করব সে তো আমার না।
অন্তর আর রানী বিয়ে হল, এক বছর পার হলো। সন্তানের কোন খবর নেই। তা নিয়ে অন্তরের কোনো মাথাব্যথা নেই। রানী আর অন্তরের কাছে আমি এতই বোঝা ছিলাম। রানী আমাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্তেতে অন্তরেরও সম্মতি থাকে। ওরা দুইজনে যুক্তি করল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে আমাকে মেরে ফেলবে।

আজ আমার বড় ঘুম পাচ্ছে। সারাদিন পরিশ্রম করে আমি অনেক ক্লান্ত। স্বামীর প্রতি আমার ভালোবাসা আজ তার প্রতিদান পাব।ওরা একজন আরেকজনকে বলে, চলো অন্তরা ঘুমিয়ে আছে। এখনই আমাদের মুখ্য সময়। ওকে এখনি শেষ করে দেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581