বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন

সুদের টাকার জন্য মা-মেয়েকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টারঃ মোঃরুবেল ইসলাম সিডর।
  • আপডেট টাইম শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সুদের টাকা জন্য মমতাজ বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূ ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমাকে (১৬) গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার দুজন কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার সিরাজপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী ও মেয়ে। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজীব চক্রববর্তী। তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার সিরাজপুর এলাকায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ওই গৃহবধূ ও তার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় বিধবা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই আট জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের আলোকে আজ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) একটি মামলা (নং ৩২) হয় এবং সেই মামলায় বিকেলে উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার সিরাজপুর গ্রামের মৃত মুক্তার হোসেনের ছেলে সবুজ মিয়াকে (৪৫) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এলাকাবাসী জানায়, পাঁচ বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ মারা যান। এরপর মমতাজ বেগম তার একমাত্র মেয়ে ঝুমাকে নিয়ে বন বিভাগের জমিতে বসবাস করে আসছেন। এছাড়া তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করে অনেক কষ্টে মেয়ে ঝুমাকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোরকমে তাদের সংসার চলছে। কিন্তু এক চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন মমতাজ বেগম। পরে তাকে বাধ্য হয়ে স্থানীয় আব্দুল গফুর ও মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। টাকা নেওয়ার দুই মাস পর থেকে সুদের টাকা আদায় করতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন গফুর-মনিররা। এ নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মাতব্বররা মধ্যস্থতা করে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দেন। কিন্তু সে সময় শেষ না হতেই আব্দুল গফুর, তার স্ত্রী কুলসুম বেগম, ছেলে রিপন হোসেন এবং মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পী বেগম, মেয়ে মুক্তা আক্তার, ছেলে শহিদ হোসেন, স্থানীয় নয়ন হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করেন। সুদের টাকা আদায় করতে তারা মমতাজ বেগমকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকেন। মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে মেয়ে ঝুমাকে একই গাছে বেঁধে রাখেন এবং মারধর করেন তারা। দৃশ্যটি মোবাইলে ধারণ করতে গেলে মমতাজের ছোট বোন মেহেরিন সুলতানাকেও তারা গাছের সঙ্গে বাঁধার চেষ্টা করেন। মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালান ওই ব‌্যক্তিরা। তবে এলাকাবাসীর অনেকে বিষয়টি দেখলেও তাদেরকে উদ্ধার না করে এড়িয়ে গেছেন। পরে কৌশলে মেহেরিন পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তবে পুলিশ আসার খবরে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান। নির্যাতিতা মমতাজ বেগম বলেন, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় তিন লাখ টাকা হারিয়েছি। ওই টাকা যোগাড় করতে আব্দুল গফুর ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম এক মাসের সময় দিয়েছেন। আমি ওই টাকা ফেরত দেবো। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত আব্দুল গফুর তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, তাদেরকে টাকা আদায়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকে গাছে বাঁধা হয়নি বা মারধরও করা হয়নি। ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম সিকদার বলেন, ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাদেরকে মারধর করছে। পরে পুলিশ গিয়ে মা-মেয়েকে থেকে উদ্ধার করেছে। কালিয়াকৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581