রিপোর্ট জয় মন্ডল পিরোজপুর:-
সরুপকাঠি সীমান্তে পাসে ভিমরুলিতে জমে উঠেছে প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত পেয়ারার ভাসমান হাট। এ বছর পেয়ারার বাজার মূল্য কিছুটা মন্দা হলেও ক্রেতা বিক্রেতা তেমন কমেনি। তবে কমেছে পর্যটকদের ভীড়। কারণ হিসেবে কোভিড ১৯ কে দায়ী করেছেন পেয়ারা ব্যবসায়ীরা। পেয়ারা ব্যবসায়ী রনি হালদার জানান, এ বছর পেয়ারার দাম কম। করোনা ভাইরাসের কারণে কেহই ঝুঁকি নিয়ে বাগান কিনতে চাচ্ছে না। ক্রেতা বিক্রেতা সকলেরই মধ্যে একটা আতংক বিরাজ করছে। তারপরও প্রতিদিন পেয়ারার বিপণন ও ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ভীমরুলীর, আটঘর কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে পেয়ারা চাষি ও পাইকারদের ভিড় ক্রমেই জমে ওঠে। স্থানীয় ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ন গঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী, ফেনী ও ফরিদপুর থেকে আসা বেপারীরা নৌকা থেকেই পেয়ারা কিনে ট্রলার অথবা ট্রাকে করে তাদের গন্তব্যে নিয়ে ভোক্তার নিকট পৌছে দেন। ভরপুর এ বাজার দুপুরের মধ্যেই শূন্য হয়ে যায়। এই অঞ্চলে মুকুন্দপুরী, লতা ও পুর্নম-ল জাতের পেয়ারা উৎপাদন হয়। এই পেয়ারা খেতে মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হয়ে থাকে। আটঘর, কুড়িয়ানা,শতাদশকাঠি, কাফুরকাঠি, ভীমরুলি, শতাদশকাটি, জিন্দাকাঠি, ডুমরিয়া, খাজুরিয়া, বাউকাঠি, বেতরা, হিমানন্দকাঠি, পোষন্ডা, রমজানকাঠি, সাওরাকাঠি, কাচাবালিয়া, নরেরকাঠি গ্রামে প্রচুর পরিমানে পেয়ারা উৎপাদন হয়। শুক্রবার সকালে ভীমরুলি, আটঘর- কুড়িয়ানা বাজারের গিয়ে দেখা যায়, পাকা পেয়ারার প্রতি মণ(৪০কেজি) শুধু পাঁকা২৫০ টাকা, আধা পাঁকা ৩০০টাকা এবং শুধু কাঁচা ৩৫০ টাকা, দরে চাষীরা পাইকারী বিক্রি করছে। এখন শ্রাবণ মাস তাই ঝালকাঠির ব্রান্ডিং পণ্য পেয়ারার ভরা মৌসুম। ঝালকাঠির প্রায় ১৭টি গ্রামের প্রায় ২০০০ হেক্টর জুড়ে এই অঞ্চলের প্রধান অর্থকারী ফসল হিসেবে শতবর্ষ জুড়ে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন পেয়ারা চাষিরা খুব ভোরে পেয়ারা বাগান থেকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে ৩-১০ মন করে পেয়ারা এই হাটে এনে নৌকায় বসেই বিক্রি করেন।
ভাসমান বাজারে আমড়া প্রতি মণ ১৪০০/১৫০০শত টাকা দরে পাইকারী বিক্রি করছে বাগান মালিকরা। লেবু প্রতি হালি ২০ টাকা করে দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ বিষয়ে ঝালকাঠির রমজানকাঠি কারিগরি ও কৃষি কলেজের বিভাগীয় প্রধান(কৃষি) বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড. চিত্ত রঞ্জন সরকার বলেন, পেয়ারা চাষ খুব লাভজনক হয়ে উঠছে। হালকা বেলে ও দো- আঁশ মাটিতে পেয়ারা ভাল হয়। ইহা বীজ দ্বারা বংশ বিস্তার করা সহজ। এছাড়াও কলম দ্বারাও খুব সহজে বংশ বিস্তার করা যায়। পেয়ারা অ্যানথ্রাকনোজ নামক রোগে আক্রমণ করে। এতে ফল ও পাতায় দাগ পড়ে। এ রোগ দমনের জন্য সপ্তাহ পর পর কম্পেনিয়ন ২ গ্রাম /লিটার পানি স্প্রে করতে হবে। এবছর বৃষ্টির কারণে পেয়ারা বাজারে আসাতে ১৫ দিন সময় বেশি লেগেছে। প্রায় ২০০ বছর ধরে এ অঞ্চলে মাটি কেটে কান্দি বানিয়ে স্বজন পদ্ধতিতে পেয়ারার চাষ হয়ে আসছে।”
Leave a Reply