কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার পুরাতন শিক্ষা কেন্দ্র “দারুল ইরফান মুহিউচ্ছুন্না” মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা ইউনুছ আরমান সরকারের প্রতি আহবান করে বলেন,করোনার এমন কঠিন মুহুর্তে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিবেচনায় এনে সরকারি প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন,
করোনার পরিস্থিতি উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি থাকবে বলে ঘোষনা দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে ছাত্রছাত্রীরা হয়তো বাসায় বসেই পড়াশোনা করতে পারবে। তাদের শিক্ষা কারিকুলাম হয়তো শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট করে দিবে।
কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাই জড়িত নয়, এখানে জড়িত রয়েছে অনেকগুলো পরিবারের বাঁচা মরার লড়াই। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা, অন্যান্য স্টাফদের জীবিকা নির্বাহ হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই। ১/২ মাস হলে কষ্ট করে ম্যানেজ করা যেতো, কিন্তু ৭/৮ মাসের ধাক্কা স্বল্প আয়ের শিক্ষকদের পক্ষে সামাল দেয়া কিভাবে সম্ভব হবে? সরকার নিবন্ধিত স্কুল কলেজগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও যথাসময়ে তাঁরা বেতন-ভাতা পাবেন। কিন্তু অনিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসা, হেফজখানা এবং ব্যক্তি পর্যায়ের স্কুল কোচিং এগুলোর সাথে যারা জড়িত তাঁদের বেতন কে পরিশোধ করবে?
এসব প্রতিষ্ঠান এর আয়ের উৎস হল শিক্ষার্থীদের বেতন, ফি এবং বিভিন্ন ডোনারদের প্রদত্ত অনুদান। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন বন্ধ, এমনকি ডোনারদের অনুদানও বন্ধ। এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাময় । একদিকে নিজেদের বেতনের উৎস বন্ধ, অপরদিকে ভাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা।
সরকার প্রণোদনা ঘোষণা দিয়ে সেই টাকা যদি শুধুমাত্র পুঁজিপতিদের বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের পিছনে ব্যয় করে, তাহলে মানুষ গড়ার কারিগর এসব শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ কি হবে? আর শিক্ষকরা যদি নিঃস্ব হয়ে যান, স্বল্পপুজির এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ-ই বা কী হবে?
সম্মানি এসব মানুষগুলি না পারবেন কারো কাছে হাত পাততে, না পারবেন খেয়ে পরে বাঁচতে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই ভাবতে হবে। সরকারকে দ্রুত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শিক্ষার সাথে জড়িত এসব মানুষ গড়ার কারিগরদের খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য বিনাশর্তে অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের বাসা ভাড়া মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে। ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করতে হবে।
শুধু নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের কথা ভাবলে চলবে না, মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা এসব বিপদে পড়া মানুষদেরও রক্ষা করার কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারের।
Leave a Reply