রাজশাহী মহানগর পুলিশ ( আরএমপি ) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক সাক্ষাৎকারে বলেন কিশোর অপরাধ ঠেকাতে দেশে প্রথমবারের মতো কিশোর গ্যাং সদস্যদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)। এতে বখাটেপনা, ছিনতাই, ইভটিজিং, প্রতারণাসহ নানা অপরাধে যুক্ত ৫০০ কিশোরের তথ্য, ছবি ও মোবাইল ফোন নম্বরসহ অভিভাবকের তথ্যও সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিশোরদের বিপথে গমন ঠেকাতে আরএমপির এই উদ্যোগ খুবই কার্যকরী বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক। সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় নিয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে স্বপ্নচাষ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এমন নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্বপ্নচাষ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক এনায়েত করিম। তিন পর্র্বের সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় পর্ব আজ বৃহস্পতিবার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। স্বপ্নচাষ টোয়েন্টিফোর ডটকম : স্যার, রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের একটা দৌরাত্ম ছিল। আপনি আরএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমানে নগরীতে এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এটা নিয়ন্ত্রণে কি ধরনের কৌশল আপনি নিয়েছেন? আরএমপি কমিশনার : রাজশাহীতে কিশোর গ্যাং, বাইক পার্টির দৌরাত্ম্য ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছিল। ফলে এসব অপরাধ ঠেকাতে কিশোর গ্যাং সদস্যদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছি। সারাদেশের মধ্যে কিশোর গ্যাং নিয়ে রাজশাহীতেই প্রথম ডিজিটাল ডাটাবেজ গড়ে তোলা হয়েছে। এতে কিশোরদের নামপরিচয়সহ ফোন নম্বর, বাবা মায়ের নম্বরও পুলিশের সংরক্ষণে থাকছে। এরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, তা নিয়মিত জানা যাচ্ছে। স্বপ্নচাষ টোয়েন্টিফোর ডটকম : ডিজিটাল ডাটাবেজের সফলতা সম্পর্কে যদি বলতেন। আরএমপি কমিশনার : কিশোর গ্যাংয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ করার পর তাদের অপরাধ অনেকটাই কমেছে। শহরে আগের মতো বাইকপার্টি নেই, ছিনতাই, খুন, ইভটিজিংও কমেছে। সারাদেশের পুলিশের মধ্যে রাজশাহী নগর পুলিশের এই উদ্যোগ এখন উদাহরণ। আরও পড়ুন : রাজশাহীকে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দিতে চাই : আরএমপি কমিশনার স্বপ্নচাষ টোয়েন্টিফোর ডটকম : কিশোরদের সুপথে রাখতে আরও কোনো পরিকল্পনা আছে কী? আরএমপি কমিশনার : কিশোররাই জাতির ভবিষ্যৎ। তারা দেশ ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের এই কিশোররা যদি অকালেই বিলীন হয়ে যায় তাহলে আমরা সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই তাদের রক্ষার্থে নতুনভাবে আমার পরিকল্পনা আছে। কিশোরদের জন্য মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম করার জন্য ঢাকা থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের (অধ্যাপক আবু সাঈদ, আসাদুজ্জান নুরের মত ব্যক্তিদের) রাজশাহীতে আমন্ত্রণ জানাবো। এর মাধ্যমে তারা অন্ধকার থেকে আলোর পথ খুঁজে পাবে।’ স্বপ্নচাষ টোয়েন্টিফোর ডটকম : কিশোররা বিপথে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাদকে আসক্তি দায়ী কিনা? দায়ী হলে তা নিয়ন্ত্রণে আপনি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি-না? আরএমপি কমিশনার : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মাদকের ব্যাপারে জিরোটলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। অধিকাংশ কিশোর এই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই মাদক থেকে দুরে রাখতে কিশোরদের খেলার মাঠে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তারা যাতে মাদক থেকে চিরতরে দূরে সরে যায় সেজন্য ইতোমধ্যেই আমি বেশকিছু টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেছি। এছাড়া মাদক নির্মূলে আমি আমার ঘর থেকেই কাজ শুরু করেছি। অর্থাৎ বর্তমানে রাজশাহীতে কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে জড়িত নেই। কোনো মাদক ব্যবসা নেই, মাদকের কোনো সিণ্ডিকেট নেই। রাজশাহী নগরবাসী যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে মেট্রোপলিটনকে একটি মডেল শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ স্বপ্নচাষ টোয়েন্টিফোর ডটকম : আরএমপি কমিশনারের দায়িত্ব ছেড়ে হয়তো আরও বড় কোনো দায়িত্বে যাবেন, তার আগে রাজশাহীকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান? আরএমপি কমিশনার : আমি উত্তরবঙ্গের সন্তান। এই শহরকে নিয়ে আমি আলাদা টান অনুভব করি। তাই আমি চাই রাজশাহী হবে সুন্দর ও শান্তির নগরী। এজন্যই প্রতিটি পুলিশ সদস্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমি সেবা করতেই এসেছি। রাজশাহীতে যতদিন থাকবো- মেধা, প্রজ্ঞা সবকিছু দিয়েই আমি রাজশাহীবাসীর সেবা করতে চাই।’ উল্লেখ্য, দেশের চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা আবু কালাম সিদ্দিক ১৯৯৯ সালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। পরে বিভিন্ন সময় তিনি গোয়েন্দা (ডিবি) শাখা, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ঢাকা রেঞ্জে ক্রাইম ও অপারেশনে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনসহ পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
Leave a Reply