যৌতুকের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে অবশেষে বিষপানে নিজের জীবনই বিসর্জন দিলেন ইতি আক্তার(২০) নামের এক গৃহবধূ। নিহত ইতি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের মো: নবীন মুন্সীর (২৬) স্ত্রী। শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নিজগৃহে বিষপান করেন ইতি, পরবর্তীতে তাকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পারিবারিক সূত্র জানায়, দরিদ্র পিতা মো: ঈসা মুন্সীর মেয়ে ইতিকে বছর তিনেক আগে বিয়ে দেন একই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মজিবর মুন্সীর ছেলে নবীনের সাথে। বিয়ের পর প্রথম একটি বছর সুখেই কাটে ইতির সংসার জীবন। এরপরেই ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে ধীরেধীরে শুরুহয় নির্যাতন। এক পর্যায়ে ইতির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় তার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির অন্য সদস্যরা। এ নিয়ে ইতি বেশ কয়েকবার তার পিতার বাড়িতেও চলে আসেন বলে জানায় তার পরিবার। যৌতুকের দাবি ইতির পরিবার কয়েকবার মীমাংসা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ ব্যাপারে ইতির বাবা মো: ঈসা মুন্সী বলেন, বিয়ের সময়ে কোনো ধরনের যৌতুক বা টাকাপয়সা দেয়ার কথা না থাকলেও বিয়ের এক বছরের মাথায় ৩লাখ টাকার দাবিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন তার জামাতা নবীন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার মেয়ের ওপর কয়েক দফায় নির্যাতন চালায় নবীন। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে ইতি তারকাছে একটি মোবাইল চাইলে তিনি তা কিনে দেন, যদিও সে ফোন তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে ব্যবহার করতে দেয়নি। আজ (শুক্রবার) দুপুরে ইতির শ্বশুর তাকে ফোন করে জানান, ইতি কে বা কার সাথে ফোনে কথা বলেছে, এ নিয়ে স্বামী স্ত্রী দুজনের মাঝে ঝগড়া হলে ইতি ঘরে থাকা বিষপান করেছে। কান্না জড়িত কন্ঠে ইতির বাবা বলেন, “আমার মাইয়াডা দেড়টার কালে (সময়ে) বিষ খাইছে, আর আমারে জানাইছে ৩টার কালে(সময়ে)। বিষ খাওনের লগেই (সাথেই) যদি হাসপাতালে নেতে (নিত) হেলে (তাহলে) আমার মাইয়াডা আইজ হয়ত মরতে না।” তিনি আরও বলেন, আমি এই মৃত্যুর সঠিক বিচার চাই। ইতির পরিবারে এসব অভিযোগের ব্যাপারে তার শ্বশুর মো: মজিবর মুন্সীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করে ফোন বন্ধ করে রাখেন। এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি এ ব্যাপারে গলাচিপা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, তবে নিহতের পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
Leave a Reply