বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০২ অপরাহ্ন

মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয় না, উল্টো প্রকৌশলীকে বদলীর হুমকি ঠিকাদারের

মোঃ মিজানুর রহমান কুড়িগ্রাম বিশেষ প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট টাইম রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

কুড়িগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনের এপ্রোচ রোড নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয় না নির্মাণ কাজ। উল্টো কাজের গুণগতমান নিশ্চিতে তদারকির দায়িত্বে থাকা রেলওয়ে প্রকৌশলীকে বদলীর হুমকির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন “কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস” এর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস চালুর পর থেকেই কুড়িগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে রেলকর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের নিরাপদে ট্রেনে উঠা-নামার জন্য স্টেশনের পূর্বের জরাজীর্ণ প্লাটফরম ভেঙ্গে এক কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের সুন্দর ও আধুনিক প্লাটফরম নির্মাণ করা হয়। আরকে রোড থেকে স্টেশনে ঢোকার এপ্রোচ রোড দীর্ঘ ৪০ বছরেও মেরামত না করায় সেটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় এলাকাবাসীর আন্দোলন ও লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে রেল কর্তৃপক্ষ ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফুটপাত, ড্রেন, ডিভাইডার ও এপ্রোচ রোড নির্মাণ কাজ শুরু করে। এপ্রোচ রোডের দুইপাশে ড্রেন, কংক্রিট ব্লকের ফুটপাত, ডিভাইডার এবং কার্পেটিংসহ সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুধুমাত্র গ্রিল ও সিলকোটের ফিনিশিং কাজ এখনো হয়নি। ফিনিশিং সিলকোট যথাসময়ে না করার কারণে রাস্তার স্থায়ীত্ব কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞরা। সিলকোটের কাজ করার জন্য গত মে মাসের ৭ তারিখে ঠিকাদার উদ্যোগ নিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী দেখতে পান যে, নিম্নমানের ৮০-১০০ গ্রেডের ইরানি বিটুমিন আনা হয়েছে। কিন্তু কার্পেটিংসহ সব কাজ দেশীয় উন্নতমানের বিটুমিন ৬০-৭০ গ্রেড দিয়ে করা হয়েছে। ফলে প্রকৌশলী নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ করা যাবে না বলে ঠিকাদারকে জানিয়ে দেন। এতে ঠিকাদার জরুহুল হক চড়াও হয়ে প্রকৌশলীর সঙ্গে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে স্থাণীয় লোকজন যুক্ত হয়ে নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ করা যাবে না মর্মে কাজ বন্ধ করে দেন। নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের চেষ্টার বিষয়ে ঠিকাদারকে প্রতিনিধি রাব্বি মিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি সিডিউল দেখিয়ে বলেন, “সিডিউলে ৬০-৭০ গ্রেড অথবা ৮০-১০০ গ্রেডের কথা উল্লেখ আছে। সেজন্য আমরা ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন নিয়ে এসেছি। স্থাণীয় জনগণ তখন ঠিকাদারকে প্রশ্ন করেন, তাহলে আপনারা এতদিন কেন ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন দিয়ে কাজ করলেন? তখন ঠিকাদার জবাব দেন, “সাইট ইঞ্জিনিয়ার রাজ্জাক সাহেব সব সময় চেষ্টা করেন কিভাবে ঠিকাদারের লোকসান করানো যায়”। ওনার চাপে আমরা ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন দিয়ে কাজ করেছি। ওনাকে বদলী করে বাকি কাজ করবো বলে ঠিকাদার কাজ না করে চলে যান। সিডিউলে দুই ধরনের গ্রেডের উল্লেখ থাকা এবং হুমকির বিষয়ে রেলের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাককের সাথে কথা হলে দুই ধরনের গ্রেডের বিটুমিন সিডিউলে উল্লেখ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আপনার সামনে সোনা এবং তামা দুটি অপশন থাকলে আপনি কোনটি বেছে নিবেন? ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন দিয়ে করা রাস্তা বেশি টেকসই হবে। এ কারণে সেটি দিয়ে করানো হয়েছে। দুটি অপশন রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, একান্তে কোনভাবেই যদি মার্কেটে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন না পাওয়া যায় সেইক্ষেত্রে কাজ চলমান রাখার স্বার্থে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিকল্প অপশন রাখেন। হুমকির বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ঠিকাদার সরাসরি আমাকে হুমকি দেননি, শুনেছি স্থাণীয় লোকজন ও আমার স্টাফদের সামনে ঠিকাদার আমাকে বদলি করাবেন এবং চাকরি করা বের করে দিবেন এসব বলেছেন। ঠিকাদাররা সব সময় প্রভাবশালী হয় এবং তাদের স্বার্থে আঘাত লাগলে নানান কথা বলবেই। সাইটে প্রদর্শিত সাইনবোর্ডে দেখা যায় কাজের মেয়াদ ১৮০ দিন কিন্তু ইতিমধ্যে সেই সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কাজটি সম্পন্ন হচ্ছেনা কেন এবিষয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঠিকাদারের ১৮০ দিন অতিবাহিত হয়েছে এটা ঠিক তবে ওনারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন এবং সেটি ডিজি মহোদয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া ঠিকাদারকে অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় নুরবক্ত মিয়া(৬০),মতিয়ার রহমান(৬৫),নুর আলম(৫০),মুকুল হোসেন(৫৫) জানান, ইতিপূর্বে রেলস্টেশনের দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজে আগের প্রকৌশলীর অনিয়ম এবং গাফিলতির কারণে নিম্নমানের কাজ হয়েছে এবং সেই বিষয়ে সকল মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে এসেছিলেন। ভবন হস্তান্তরের এক মাসের মাথায় জল ছাদ ভেঙ্গে নতুন করে করতে হয়েছে। বর্তমান রেলের প্রকৌশলী সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে সিডিউল অনুযায়ী ভালমানের কাজ করাচ্ছেন। এর ফলে ঠিকাদাররা সুবিধা আদায় করতে পারছেন না এ জন্যই ওনাকে বদলীর চেষ্টা করছেন। স্টেশন এপ্রোচ রোডের কাজটি দিনাজপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল আমিন ট্রেডার্সের নামে হলেও মুলত মুল ঠিকাদার গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জের জহুরুল হক বলে জানা গেছে। দীর্ঘ ৪০ বছরের ভোগান্তি নিরসনে স্টেশন এপ্রোচ রোডের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসী জোড় দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581