এক সময় যাদের হাত দিয়ে তৈরি হতো উন্নতমানের জামদানী শাড়ি, এখন সেই হাতে তারা ভ্যান-রিকশা ও দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত যারা এ পেশা টিকিয়ে রেখেছেন তাদেরও দিন চলছে অনেক কষ্টে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শাড়ি দখল করে নিয়েছে তাঁতপল্লীর তাঁতের তৈরি শাড়ির বাজার ।
মানিকগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের সাভার গ্রামে তাঁতের শাড়ি তৈরির কারিগরদের নিবাস । বরাইদ ইউনিয়নের আর একটি অঞ্চলের নাম সাভার। এক সময় দুই এলাকায় প্রায় ২৬০টি পরিবারে তৈরি করতো জামদানী, বেনারসি, গামছা, সুতি, সিল্ক ও লুঙ্গী। এসকল কারণেই জামদানী পল্লী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে গ্রামটি। তবে জামদানী পল্লীতে এখন আর জামদানী শাড়ি তৈরি হয় না। এ পল্লীতে এখন কাতান, জামদানী, এনডি কটন, এনডি সিল্ক, সুতি শাড়ি, থ্রি পিচ, ওড়না, ধুপিয়ানসহ তাঁতে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তাও আবার সীমিত আকারে। দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় শাড়ি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক তাঁত শিল্প। সাটুরিয়ার তাঁতপল্লীর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাউদ হাসান লাভলু জানান, সাটুরিয়ার তাঁত পল্লীর তৈরি শাড়ির চাহিদা এতটাই ছিল যে, ঢাকার বিভিন্ন শাড়ির শো-রুম থেকে আগাম টাকা দিয়ে অর্ডার দেয়া হতো। সারা বছরের পাশাপাশি বছরের দুটি ঈদ, পূজা ও বৈশাখ মাসে চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। এ কারণে বছরের দুই ঈদ , পূজা ও বৈশাখের শুরুতে দিন রাত কাজ করতে হতো কারিগরদের। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে শাড়ি আসায় ও কাচা মালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের কদর অনেকটাই কমে গেছে। ভারতীয় শাড়ির দাম কম হওয়ায় সেগুলি তাঁত শিল্পের বাজার দখল করে ফেলেছে। তিনি আরও জানান, এ কারণে একের পর এক তাঁত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারিগরদের বেকার সময় পার করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই ভ্যান-রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে।
তাঁতপল্লীর তাঁত মালিক মো. হালাল মিয়া জানান, আগের মতো কাজ নেই পল্লীতে। তারপরেও ৪টি তাঁত রয়েছে বাড়িতে। সেখানে কাজ করে ৯ জন কারিগর। স্থানীয় মিনহাজ উদ্দিন জানান, গত পাঁচ বছর ধরে কাজ না থাকায় ১৩টি তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত ১০ বছরে এখানকার কমপক্ষে ১ হাজার ২শ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে বলেও জানান।
Leave a Reply