এক সংগ্রামী মহিলার নাম মিলনী রাজবংশী। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার এই নারী ৭৫ বছর বয়সেও মাছ বিক্রি করে সংসার চালান। প্রতিদিন ভোর হলেই বেরিয়ে পড়েন মাছ সংগ্রহ করতে। তারপর পড়ায় ঘুরে ডাকতে থাকেন ‘এ মাছ লাগবে মাছ। মিলনী বসবাস করেন উপজেলার ছনকা বড়াইদ এলাকায়। প্রায় ১৩ বছর আগে তার স্বামী নিতাই রাজবংশী মারা যান। তার চার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। এখন তিনি একা। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। অভাবের তাড়নায় জীবনের তাগিদে মাছের ঝুড়ি মাথায় করে নিয়ে গ্রামের আনাচে কানাচে ছুটে বেড়ান বিক্রির জন্য । সাহসী এই পথচলায় তাকেও সহ্য করতে হয়েছে হাসি-ঠাট্টা। তবে কিছু লোক তাকে সহযোগিতাও করেছেন। বুধবার মিলনী রাজবংশীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, কিশোরী বয়সে তার বিয়ে হয় নিতাই রাজবংশী নামে এক যুবকের সাথে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় পেটে আসে লহ্মী নামে এক কন্যা সন্তান। এরপর আসে আরো তিন জন। মোট চার মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনের সংসারে বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। টাকা পরিশোধ করতে বাড়ি-ভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। এখন বেচে থাকার জন্য মাছ বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তিনি। সামান্য কিছু টাহা জোগাইয়ে ব্যবসায় নামছি। মেয়ের জামাইয়ের বোজা হতে চাই না। হাত পায় এহনও বল আছে। তাই তো ফেরি কইরা খাই।’ মিলনীর কাছে চিংড়ি, রুই, কাতলা, কই ও বোয়ালসহ স্থানীয় বিলের মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ বিক্রি করে প্রতিদিন তার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। মিলনী বলেন, দেশীয় মাছের চাহিদাই বেশী। কোনোদিন ভালো বেচাকেনা হয়, কোনোদিন আবার হয় না। বেচাকেনা ভালো হলে ওই দিন খেতে পারি, তা না হলে না খেয়ে থাকতে হয়। ৭৫ বছর বয়সী মিলনীর মাথা গুজার ঠাই নাই। তাই আপেক্ষ করে তিনি বলেন, নিজের বাড়ি নাই, জমি নাই। মাত্র দেড় শতাংশ জায়গায় ঘর তুইলে থাহি। টাহা নাই বলে ঘর উঠাতে পারি না।’
মিলনী দেশের সব নারীকে নিজের কাজকে ভালোবাসতে বলেছেন। লোকে কী বললো, তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাকেই তিনি সবচেয়ে সম্মান মনে করেন। ১নং বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, মিলনী রাজবংশী অবিরাম জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক নারী। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে প্রতিনিয়ত বেঁচে আছেন। এখন নিজেই মাছের ঝুড়ি মাথায় নিয়ে মাছ ফেরি করেন। তাকে বয়স্ক ভাতার আওতার আনার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, কোনো কাজকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। নারীরা অনেক সময় চক্ষুলজ্জার ভয়ে ঘর থেকে বের হতে চান না। কিন্তু মিলনী সেসব কথায় কান না দিয়ে নিজেই নিজের মতো করে কাজ করে চলেছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জহুরা জানান, বিধবা মিলনী রাজবংশীকে কর্মসংস্থানের জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে লিখিত ভাবে অবহিত করা হবে। এছাড়াও তিনি মাছ চাষে আগ্রহী হলে তাকে সব রকম সহায়তা দেয়া হবে। জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার সামনে সকল বাধাকে তুচ্ছ করতে যে মনোবলই যথেষ্ট তার বাস্তবিক প্রমাণ মিলনী রাজবংশী।
Leave a Reply