রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন

মাদকের ভয়াবহতার কবলে মেধাবী হানিফ থেকে একজন হানিফ পাগল হওয়ার গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১
নাম মোঃ আবদুল হামিদ। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৮৪-৮৫ ব্যাচের মেধাবী ছাত্র । পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে স্টার মার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে পাস করেছিলেন। মাদকের নেশায় মেধাবী সেই হামিদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। মাদকের কবলে পরে এক সময়ের মেধাবী ছাত্র এখন এলাকায় হামিদ পাগলা নামে পরিচিত। পরিবারের খোঁজ রাখার সময় নেই তার। তিনি চলেন আপন মনে। অসংলগ্ন আচরণের কারণে এলাকাবাসী তাকে পাগল বলেই চেনেন। শত চেষ্টা করেও তাকে নেশা থেকে ফেরাতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। এই সুযোগে তার জমি দখলে নিয়েছেন অন্য ভাইয়েরা। সহায়-সম্বল হারিয়ে ভবঘুরে এই মেধাবী হামিদ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরজমিনে দেখা যায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের মেসিডেঙ্গি গ্রামের মৃত মোঃ সাবুদ আলীর ছেলে মোঃ হামিদ । পরিবারের কাছ থেকে জানা গেছে, কাউরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান আবদুল হামিদ। শুধু তাই নয়, তিনি উপজেলায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতেও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। এসএসসিতেও প্রথম বিভাগ (স্টার মার্ক) পেয়ে বোর্ডের শিক্ষাবৃত্তি পান ১৯৮২ সালে।উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। প্রথম বিভাগ পেয়ে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন এবং লাভ করেন শিক্ষাবৃত্তি। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফিতে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালেই পরিবারে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ও ভাইদের কর্মসংস্থানের জন্য মা মৎস্য ফিসারিজ করার জন্য পুকুর খননের উদ্যোগ নেন। কিন্তু ভাইয়েরা তাকে ভুল বোঝেন। জমি নিয়ে বিভেদের জেরে নানা অজুহাতে তার উপরে নেমে আসে অত্যাচার-নির্যাতন। এরই মাঝে হতাশাগ্রস্থ হয়ে মাদকের নেশায় ঝড়িয়ে পরেন । প্রথমে সিগারেট, পরে মদ ও গাঁজার নেশায় জীবনটাই তছনছ হয়ে যায় হামিদের। এখানেই শুরু তুখোড় এই ছাত্রের পতন।বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাটা তার পক্ষে আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পাগলের মতো অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন হামিদ। বিয়ে করলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে এ আশায় তাকে বিয়ে করান পরিবার তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি এখন ছন্নছাড়া জীবনযাপন করছেন।হামিদ আফসোস করে বলেন, ‘আমার সঙ্গে যারা ছিল ওরা তো সচিব, ব্যারিস্টার, এমপি-মন্ত্রীও হয়েছে। যাদেরকে হলে সিট দিলাম, ওদের অনেকেই এখন দেশের পদস্থ কর্মকর্তা। আর আমারে লোকজন কয় হামিদ পাগলা। অনেকবার নেশা ছাড়ার চেষ্টা করেছি। ছাড়ছিও। কিন্তু শেষমেশ ছাড়তে পারি নাই। আমার মাথাটা এখন ঠিক নাই, চিকিৎসা দরকার। নেশা শুধু আমারে খাইছে না; আমার পরিবার, স্বপ্ন সব খাইছে। অকর্মা মানুষ আমি। স্ত্রী-সন্তান, ছোট বোন, মা কারো জন্যই তো কিছু করতে পারলাম না। নেশার ভয়াবহতা এরকমের নাম না জানা হাজার হামিদের সোনালী ভবিষ্যৎ পরিবারের স্বপ্ন পদ্মার ঢেউয়ের মত গ্রাস করে সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। মাদক নির্মূলে দরকার সচ্ছ আইন এবং কঠোর আইনের প্রয়োগ সেই সাথে সচেতনতা বৃদ্ধি মাদকের কুফল সম্পর্কে সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে এর ভয়াবহ পরিনতি যাতে করে এদেশে আর একজন মেধাবী ছাত্র হানিফ যেন না হয়ে যায় হানিফ পাগলা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581