মাগুরা সদরের আমুড়িয়া গ্রামে যৌতুকের দাবীতে এক গৃহবধুর দুই হাত ও একটি পা ভেঙ্গে দিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ফেলে রেখে গেছে আমির হোসেন নামে এক পাষন্ড স্বামী। এছাড়া ওই নারীর পুরো শরীরে মারপিট করে অসংখ্য জায়গায় মারাত্মক যখম করেছে নির্দয় স্বামী। শুক্রবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটলেও ভয়ে ও অজ্ঞতায় কাউকে কিছু জানাতে পারেনি স্মৃতি বেগম (৩৫) নামে ওই নারী ও তার দিনমজুর বাবার পরিবার। আজ সোমবার সংবাদ পেয়ে মাগুরা জেলা মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ ও জেলা ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের কর্মকর্তাবৃন্দ হাসপাতালে পরিদর্শণ করলে এ ঘটনা প্রকাশ পায়। নির্যাতিতা স্মৃতি বেগম এর বাবা জেলার শ্রীপুর উপজেলার জোকা গ্রামের দিনমজুর শেখ মশিয়ার রহমান জানান- সতের বছর আগে মাগুরা সদরের কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের আমুড়িয়া গ্রামের ফুলমিয়া মোল্যার ছেলে আমির হোসেনের সাথে তার মেয়ে স্মৃতির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তিনি জামাইকে বিভিন্ন সময় একাধিকবার যৌতুকের টাকা ও মালামাল দিয়েছেন। ৫ বছর আগে নিজ বাড়ির জমি বন্দক রেখে জামাইকে ওমান পাঠিয়েছেন। গত জানুয়ারী মাসে বিদেশ থেকে ফিরে এসে জামাই আবার টাকা দাবী করে। এ অবস্থায় প্রায়ই মেয়ের সাথে আবারও নানা রকম নির্যাতন করে। এতে জামাই আমিরকে উৎসাহ দেয় তার বাবা ফুলমিয়া ও মা খাদিজা বেগম। ঘটনার দিনে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জামাই আমির হোসেন লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে স্মৃতি বেগমের দুই হাত ও একটি পা ভেঙ্গে দেয়। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অকথ্য নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে স্মৃতি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার স্বামী তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সেখানে চিকিৎসা দেয়। খবর পেয়ে স্মৃতির বাবা-মা এসে তার চিকিৎসা শুরু করে। গুরুতর আহত স্মৃতি বেগম জানান- যৌতুকের জন্য স্বামী আমির হোসেন প্রায়ই তাকে মারপিট করে। ৪মাস আগে বিদেশ থেকে ফিরেই মারপিট করে তার একটি হাত ভেঙ্গে দেয় পাষন্ড স্বামী। সর্বশেষ গত শুক্রবার তার শরীরে যেটুকু গয়না ছিল সব কেড়ে নিয়ে তার স্বামী ও শাশুড়ি তার উপর অত্যাচার শুরু করে। এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে তার দুটি হাত ও একটি পা ভেঙ্গে দেয়। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে সেই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে যায় স্বামী আমির। তিনি বলেন- গরীব বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে যত সহায়তা সম্ভব ছিল সবই করা হয়েছে। কিন্তু স্বামী নিজে কাজ না করে সম্পূর্ণই শ্বশুরের পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চায়। আমি প্রতিবাদ করলেই আমার উপর অকথ্য অত্যাচার করে। এ ব্যাপারে স্বামী আমির হোসেন মোবাইলে জানান- বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা চাওয়া নিয়ে তাদের ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়া মারামারির পর্যায়ে পৌছলে এক পর্যায়ে স্মৃতি বেগমের হাতপা ভেঙ্গে গেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি মমতাজ বেগম জানান- ঘটনা জানার সাথে সাথে আমরা মাগুরা সদর হাসপাতালে গিয়ে মেয়েটির খোঁজ খবর নিই। প্রথমে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সাহস না পেলেও তাকে অভয় দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। এ ব্যাপারে মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান- নারী নির্যাতনের ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবে না। ভিকটিম নারী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply