মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৫ অপরাহ্ন

মহামারীতে সাইয়্যেদেনা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত! ? Matrijagat TV

মাতৃজগত টিভি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০২০

আমিরুল মু’মিনীন, খলিফাতুল মুসলিমীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর আমলে সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে দেখা দেয় মহামারী প্লেগ। খলিফা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে জানতে পারলেন, সিরিয়ায় মহামারী প্লেগ দেখা দিয়েছে। তাতে তিনি তাঁর সিরিয়া সফর স্থগিত করেছিলেন। এটি ছিল যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। মুসলিম উম্মাহর জন্য তা ছিল অনেক বড় শিক্ষণীয়। ৬৩৯ ঈসাব্দে হযরত ওমর (রাঃ) ইসলামি খেলাফতের আমির।তিনি মদিনা থেকে ‘সারগ’ নামক অঞ্চলে পৌছলে সেনাপতি হযরত আবু উবায়দাহ (রাঃ) জানান যে, সিরিয়ায় প্লেগ তথা মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সে সময় তিনি সফর স্থগিত করেছিলেন। করোনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে হযরত ওমর (রাঃ) সে ঘটনায় রয়েছে উদ্দীপনা। ঘটনাটি এমন- সিরিয়া মহামারী প্লেগ-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় হজরত ওমর প্রবীণ সাহাবাদের কাছে এ মর্মে পরামর্শ চান যে, তিনি সিরিয়া সফর করবেন নাকি মদিনায় ফিরে যাবেন? সাহাবাদের মধ্য থেকে দুটি মতামত জানানো হয়- প্রবীণ সাহাবাদের পরামর্শ : কিছু সাহাবা মতামত দিলেন যে, আপনি যে উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, সে উদ্দেশে সফর অব্যাহত রাখেন। অর্থাৎ সিরিয়ায় যাওয়ার পক্ষে মত দেন। আবার কিছু সাহাবা বললেন, ‘খলিফার সিরিয়া যাওয়া উচিত হবে না।’ আনসার ও মুহাজিরদের পরামর্শ সভা : হযরত ওমর (রাঃ) প্রবীণ সাহাবাদের কাছ থেকে দুটি মতামত পাওয়ায় পুনরায় পরামর্শের জন্য আনসার ও মুহাজির সাহাবাদের ডাকলেন। তারাও মতপার্থক্য করলেন। প্রবীন কুরাইশদের পরামর্শ সভা: খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) সবশেষে প্রবীণ কুরাইশদের ডাকলেন। তারা কোনো মতানৈক্য না করে সবাই এ মর্মে মতামত ব্যক্ত করলেন যে- সিরিয়ার সফর স্থগিত করে আপনার মদিনায় প্রত্যাবর্তন করা উচিত। আপনি আপনার সঙ্গীদের মহামারী প্লেগের দিকে ঠেলে দেবেন না। হযরত ওমর (রাঃ) প্রবীণ কুরাইশদের মতামত গ্রহণ করে সিরিয়া সফর স্থগিত করে মদিনায় ফিরে গেলেন। খলিফার মদিনায় ফেরত যাওয়া দেখে সেনাপতি হযরত উবায়দাহ (রাঃ) বললেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাকদির থেকে পলায়ন করে ফিরে যাচ্ছেন?’ সেনাপতি হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ) এর কাছ থেকে এ কথা শুনে হযরত ওমর (রাঃ) কষ্ট পেলেন। প্রিয় মানুষের কাছে যেভাবে আপনজন কষ্ট পায়। কেননা হযরত আবু উবায়দাহ (রাঃ) ছিলেন খলিফার অনেক পছন্দ ও ভালোবাসার পাত্র। তাছাড়া সেনাপতি হযরত আবু উবায়দাহ (রাঃ) ছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবাদের অন্যতম। তখন হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, ‘হে আবু উবায়দাহ! এ কথাটি তুমি না বলে যদি অন্য কেউ বলতো! তিনি সেনাপতির কথার উত্তরে বললেন- ‘হ্যাঁ’, আমরা আল্লাহর এক তাকদির থেকে আরেক তাকদিরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।’ হযরত ওমর (রাঃ) সেনাপতি হযরত আবু উবায়দাহ (রাঃ) কে এ কথা বুঝাতে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন এবং বললেন- ‘তুমি বলতো, তোমার কিছু উটকে তুমি এমন কোনো উপত্যকায় নিয়ে গেলে যেখানে দুইটি মাঠ আছে। মাঠ দুইটির মধ্যে একটি মাঠ সবুজ শ্যামলে ভরপুর। আর অন্য মাঠটি একেবারে শুষ্ক ও ধূসর। এখানে উট চরানো নিয়ে বিষয়টি কি এমন নয় যে, ‘তুমি সবুজ-শ্যামল মাঠে উট চরাও। আর তা আল্লাহর নির্ধারিত তাকদির অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তা-ও আল্লাহর তাকদির অনুযায়ী চরিয়েছ। এ উপমায় হযরত ওমর (রাঃ) সেনাপতিকে এ কথাই বলতে চাচ্ছেন যে, হাতে সুযোগ থাকতে ভালো গ্রহণ করার মানে এই নয় যে, আল্লাহর তাকদির থেকে পালিয়ে যাওয়া।’ সে সময় হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) একটি হাদিস বর্ণনা করেন। সে হাদিসের বর্ণনায় হযরত আবু উবায়দাহ (রাঃ) এর জিজ্ঞাসার পরিপূর্ণ সমাধান ওঠে এসেছে। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর একটি হাদিস শোনালেন। আর তাহলো- ‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারী প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি) হযরত ওমর (রাঃ) এর মহামারী আক্রান্ত অঞ্চলে যাওয়ার সমাধান যেভাবে এ হাদিসের মাধ্যমে এসেছিল, এ হাদিসের ওপর যথাযথ আমলই বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আল্লাহ সকলকে সহিহ বুঝ দান করুক। সংগৃহীত

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581