ইট, বালি আর সিমেন্টের আধিপত্যে হারিয়ে যেতে বসেছে “এসি খ্যাত” মাটির বাড়ির আভিজাত্য। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাটির ঘর ভেঙে তৈরী করা হচ্ছে ইটের বাড়ি। এক সময় শেরপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো এই মাটির বাড়ি-ঘর। কিন্তু এখন আর এসব ঘরবাড়ি খুব বেশি চোখে পড়ে না। এভাবে হয়তো কালের বিবর্তনে কোন একদিন মাটির ঘরের বিলুপ্তি ঘটবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা মাটির ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। শেরপুর উপজেলার খানপুর, মির্জাপুর, সুঘাট, সিমাবাড়ী, ভবানীপুর, বিশালপুর, কুসুম্বী, গাড়িদহ, খামারকান্দি, শাহ-বন্দেগীর বেশি ভাগ মাটির ঘর ভেঙে ফেলে নতুন করে ইট, বালি, রড,সিমেন্ট ও বাঁশ দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের কলেজ ছাত্র হুমায়ন কবির (রনি) জানান, ছোটবেলায় আমরা যখন আমাদের এলাকা ছেড়ে পশ্চিমা গ্রামের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম এবং সেই এলাকার গ্রাম ঘুরে অনেক সুন্দর সুন্দর একতলা-দোতলা মাটির বাড়ি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। কিন্তু এখন সেই সব এলাকায় আগের মতো আর মাটির ঘর নেই, কালের বিবর্তনে এসব হারিয়ে যেতে বসেছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, মাটির ঘরে বসবাস করার অনেক শান্তি। কারণ ইটের ঘরে গরম অনেকটাই বেশি। কিন্তু মাটির ঘরে ঠান্ডা আবহাওয়া পাওয়া যায়। ইটের তৈরি বাড়িতে শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা লাগে আর মাটির ঘরে গরম আবহাওয়া তৈরি হয়। শেরপুর উপজেলায় সাধারণত পূর্বাঞ্চলের চেয়ে পশ্চিমাঞ্চলে মাটির বাড়ি বেশি চোখে পড়ে, বেলে মাটি ও আঁটালো মাটির সংমিশ্রণে তৈরি হয় মাটির বাড়ি। অনেক বাড়ি দ্বিতলা বিশিষ্ট হয়ে থাকে এবং দ্বিতলার ওপরে টিনের ছাউনির নিচে বিশাল জায়গা থাকে যেখানে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গম, চাল, সরিষা ইত্যাদি মজুদ করে রাখে। এছাড়া বর্ষাকালে ধান শুকানোর জন্য মাটির ঘরের তালা ব্যবহার করে থাকেন। অনেক সৌখিন মানুষ ঘরের ভিতরে কারুকার্য অঙ্কন করে থাকেন ও দেয়ালে রঙ ব্যবহার করে থাকেন। এ জন্য দেখে বুঝার উপায় থাকেনা যে এটি মাটির তৈরি ঘর। কিন্তু সে চিত্র এখন বদলাতে শুরু করেছে, ভেঙে ফেলা হচ্ছে পুরনো মাটির ঘরগুলো। অনেক মাটির ঘরের বয়স প্রায় শত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কেউবা ইটের ঘরের সঙ্গে মাটির ঘর রেখেছেন বাবার শেষ স্মৃতি হিসাবে। বর্তমানে মাটির ঘর যেভাবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় বিলুপ্ত হবে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী এসব মাটিরঘর।
Leave a Reply