বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে চলমান লকডাউনের মধ্যে চালু হওয়া দূরপাল্লার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। সেইসঙ্গে সরকার ও সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দেওয়া নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। তাই ভাড়া বাড়ানোর পরও বাসগুলোর সব আসনেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এছাড়া বেশির ভাগ যাত্রীর মুখেই মাস্ক নেই। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার আছে শুধু কাগজ কলমে।মঙ্গলবার ২৫মে সকালের দিকে বগুড়া শহরের চারমাথা বাস টার্মিনাল, মাটিডালি মোড় ও বনানী এলাকায় গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দূরপাল্লার বাস চালু হওয়ায় টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পরিবহন সংকট না থাকায় যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ্য করা গেলেও প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই তাঁদের। এমনকি এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আগ্রহ নেই। ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনসহ বেশকয়েকটি বাসেই কোনো আসনই ফাঁকা নেই। সব আসনেই নারী পুরুষ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে বাসগুলো। এছাড়া বেশির ভাগ যাত্রীর মুখেই মাস্ক নেই। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা থাকলেও তাদের কোনো জোরালো ভূমিকা নেই। রহস্যজনক কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে সকালের দিকে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য কিছু বাস আটকে রাখা হলেও পরবর্তীতে সেসব ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে সেই আগের মতোই অনেকটা নির্বিঘ্নে সব গণপরিবহণ চলছে। এমনকি অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। বাস যাত্রীরা বলেন, সাধারণত ঢাকায় যেতে বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানির বাসে তাঁদের ৩৫০-৪৫০ টাকা লাগতো। কিন্তু এখন ৫৫০-৬৫০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এসব যাত্রীরা বলেন, বাসে উঠার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া বা মাস্ক পড়ার ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি তাঁদের। তাছাড়া চালক হেলপারের মুখেইতো মাস্ক নেই। এছাড়া বাসে অর্ধেক যাত্রী অর্থাৎ দুই সিটে একজন করে যাত্রী থাকার কথা। কিন্তু কোথায় দেখেন প্রত্যেক সিটেইতো যাত্রী নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা। বাস চালক শামছুল হক বলেন অতিরিক্ত যাত্রী তোলার জন্য মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ তার গাড়ি আটক করেছিল। তবে শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে তদবির করে সামান্য চা-নাস্তার খরচ দিয়ে ছেড়ে নেন বলে বলে জানান তিনি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে হাইওয়ে পুলিশের শেরপুর গাড়ীদহ ক্যাম্পের ইনচার্জ বানিউল আনাম বলেন সরকারি বিধি-নিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ নেই। তাই বাসগুলোতে তল্লাশি করা হচ্ছে। অর্ধেক আসনের বেশি যাত্রী থাকলেই আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে গণসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কোনো বাস থেকে টাকা নেওয়ার কোনো অভিযোগ পাননি বলেও জানান তিনি। বগুড়া জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের দেওয়া চারদফা নির্দেশনা মেনে বাসে যাত্রী পরিবহনের জন্য চালক ও সব শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাড়ি ছাড়ার শুরু ও শেষে জীবাণুমুক্ত করা পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন না করা-এসব নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।
Leave a Reply