বগুড়া জেলা মোটরমালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতাশীন দলের দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশ সাংবাদিক সহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শটগানের গুলি এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে। ৯ই ফেবরুয়ারি ২১ইং মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ব্যাপী বগুড়া শহরের চারমাথাস্থ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চত্বরে এই সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া জেলা মোটরমালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতাশীন দলের দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অন্ত কোন্দল ও বিরোধ চলে আসছে। বিরোধ থাকা অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সদর থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, আমিনুল ইসলাম কমিটির বৈধতা নিশ্চিত করে নির্বাচনের বিরোধিতা করে মোটরমালিক গ্রুপের অফিস ও মালামাল তাদের দাবী বর্তমান কমিটির হেফাজতে চারমাথা বাসটার্মিনাল এলাকায় রাখেন। মঙ্গলবার মোটরমালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে চারমাথা এলাকায় গিয়ে আমিনুল ইসলাম ও পূর্নাঙ্গ কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটরমালিক গ্রুপের অফিস দখলের ঘোষণা দিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শত শত কর্মীদের নিয়ে লাঠি, রড সহ অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলামের ও মটর মালিক এবং শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন চারমাথা এলাকায় সমবেত হন। তারা যেকোনো মূল্যে অন্যায় দাবী করা মোহন গ্রুপকে প্রতিহত করার জন্য মাইকে ঘোষণা দেন এবং পরিবহন শ্রমিকদের প্রত্যেকের হাতে লাঠি নিয়ে অবস্থান নিতে বলেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল অফিসার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চারমাথায় অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনে শান্তিপূর্ণ লাঠি মিছিল শুরু করে। এ সময় মোহন গ্রুপের একদল নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে ও ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে থাকাকালে মোহন গ্রুপের লোকজন লাঠিশোটা নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। তাৎক্ষণিক আমিনুল ইসলামের লোকজন কম থাকায়, ধাওয়ায় তারা পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে শুরু করে ব্যাপক ভাঙচুর। তারা এলোপাতাড়ি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়াও আমিনুল ইসলাম ও তাদের কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত পৌর ওয়ার্ড অফিস ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় অফিসের সামনে থাকা ৭টি মোটর সাইকেল, অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র, গাড়ীর বিভিন্ন সরঞ্জামে আগুন লাগিয়ে দেয় মঞ্জুরুল আলম মোহনের নেতৃত্বে আসা শত শত দুর্বৃত্তরা। প্রায় আধঘণ্টা ব্যাপী চলে এই তাণ্ডব। এ সময় ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরা পার্সন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও শটগানের গুলি ছোড়ে। এছাড়াও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার কনস্টেবল রমজান আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ হামলাকারীদের ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। এছাড়াও পুলিশ মোহন গ্রুপের বেপরোয়া লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় পুলিশ ১২ জন হামলাকারীকে গ্রেফতার করে। সংঘর্ষের কারণে প্রায় ৩ঘণ্টা ব্যাপী মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর আমিনুল গ্রুপ চারমাথা এলাকায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকেও ফিরিয়ে দেয়। সংঘর্ষের পর চারমাথা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়াও জেলা পুলিশ থেকে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা (বিপিএম) বার সহ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা
Leave a Reply