সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গলিতে বাংলাদেশের এক তরুনীকে বিবস্র করে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ, রিফাতুল ইসলাম বাবু ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু, সাগর, মোহাম্মদ বাবা শেখ,হাকিল ও দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে। ইতিমধ্যেই ভূক্তভোগী তরুণীর বাবা ২৭ শে মে ২০২১ তারিখ রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার আইন ও পর্নোগ্রাফি অ্যাক্টে একটি মামলা করেন। মামলা নং ৪৮ ধারা ৭/৮ তৎসহ পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(১)(২)(৩)।উক্ত মামলায় টিকটক বাবুসহ অজ্ঞাত নামা আরো ৪ জনকে আসামি করা হয়। উক্ত ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ মে ২০২১ তারিখ হতে ০১ জুন ২০২১ তারিখ সকাল পর্যন্ত র্র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ও র্র্যাব-৩ এর অভিযানে ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল হতে নারীপাচার চক্রের মূল হোতা মোঃ আশরাফুল ইসলাম ওরফে বস রাফি (৩০),পিতা-আইন উদ্দিন মন্ডল,থানা-শৈলকুপা,জেলা-ঝিনাইদহ এবং তার অন্যতম নারী সহযোগী সাহিদা বেগম ওরফে ম্যাডাম সাহিদা (৪৬),মৃত নুরুল ইসলাম সরদার, অভয়নগর, জেলা -যশোর এবং ইসমাইল সরদার (৩৮),মৃত নুরুল ইসলাম সরদার, থানা-বেনাপোল,জেলা-যশোর ও মোঃ আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬), পিতা-মোহাম্মদ জামাল শেখ, থানা-বেনাপোল,জেলা-যশোর’কে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কারীরা পাচার চক্রের সাথে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এই চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে নারী ও তরুনীদের পাশ্ববর্তী দেশে পাচার করত। দেশি-বিদেশি সহ প্রায় ৫০ জন সংঘবদ্ধ চক্রের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। এই চক্রের মূল হোতা গ্রেফতার মোঃ আশরাফুল ইসলাম রাফি (৩০) এবং গ্রেফতারকৃত অন্যান্য সদস্যরা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী । ভারতে গ্রেফতারকৃত টিকটক হৃদয় তার অন্যতম সরবরাহকারী বা এজেন্ট, এছাড়াও দেশ বিদেশে তার আরও এজেন্ট বা সরবরাহকারী রয়েছে। টিকটক হৃদয় অনলাইনে টিকটক ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রুপের তরুণীদের টিকটক মডেল বানানো ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে উৎশৃংখল জীবনে আকৃষ্ট ও অভ্যস্ত করাত।পরবর্তীতে তাদের কে পার্শ্ববর্তী দেশ বা উন্নত দেশে বিভিন্ন মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন ধরনের ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গ্রেপ্তারকৃত বস রাফির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করত । মূলতঃ যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই পার্শ্ববর্তী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রচার করা হতো। পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের পর তাদেরকে বিভিন্ন নেশা জাতীয়/ মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে জোরপূর্বক অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত যাতে তারা এ ধরনের কাজে বাধ্য হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে,ভিকটিমদের বৈধ বা অবৈধ উভয় পথেই সীমান্ত অতিক্রম করানো হতো এবং সীমান্তবর্তী যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ বিভিন্ন সেফ হাউজে নিয়ে অবস্থান করানো হত।সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে লাইনম্যান এর মাধ্যমে অরক্ষিত এলাকা দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে কলকতা হয়ে দক্ষিণ অঞ্চলের ব্যাঙ্গালুরু পৌছানো হতো।বেঙ্গালুরুর সেফ হাউজ থেকে তাদেরকে ১০/১৫ দিনের জন্য বিভিন্ন খদ্দেরদেরকে সরবরাহ করা হতো। গ্রেফতারকৃত রাফি এক সময় এই ধরনের পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ছিল। তখন সে তামিল ভাষা আয়ত্ত করে নেয়।একপর্যয়ে সে রিং লিডার হয়ে যায়। পাশ্ববর্তী দেশের এজেন্ট তাকে খদ্দের প্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা কমিশন দিত। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গ্রেপ্তারকৃত বস রাফির শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি।বিগত ৮ বছর পূর্বে হতে ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে তার গমনাগমন রয়েছে।কখনও টেক্সি ড্রাইভার, হোটেল-রিসোর্ট কর্মচারী ও কাপরের ব্যবসা করত।সে বিগত ৫ বছর যাবত নারীপাচারের সাথে জড়িত হয়।২ বছর পূর্বে তার সাথে টিকটক হৃদয়ের পরিচয় ঘটে। সে টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক জন তরুণীকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে। গ্রেফতারকৃত বস রাফির অন্যতম নারী সহযোগী ম্যাডাম সাহিদা। তার একাধিক (৩) বিবাহ হয়েছিল। তার ২ মেয়ে সোনিয়া ও তানিয়া পাচার চক্রের সাথে প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় ভাবে জড়িত। সোনিয়া ও তানিয়া বর্তমানে বেঙ্গালুরে অবস্থান করছে বলে গ্রেপ্তারকৃত সাহিদা জানান। ভাইরালকৃত ভিডিওতে তানিয়াকে সহযোগী হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাহিদা বাংলাদেশ এলাকায় একটি সেফ হাউস পরিচালনা করছে।এ জাতীয় ব্যবসায় সে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত জড়িত। এছাড়া গ্রেফতারকৃত ইসমাইল ও আরমান শেখ মূলহোতা বস রাফির বিশেষ সহযোগী হিসেবে পাচার তদারকি থাকে। আজ রাজধানি কারন বাজার র্র্যাব মিডিয়া সেন্টারে গণমাধ্যমের মুখোমুখি গ্রেফতারকৃত আসামিদের হাজির করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানানো হয়।
Leave a Reply