হাসান ইসলাম,বিশেষ প্রতিনিধি: পাবনা জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ কাজে নিয়োজিত প্রায় ২১ হাজার খামারি এবার হতাশ। গবাদি পশু ব্যবসার ব্যাপারী ও হাট ইজারাদারদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ এবার পাবনার কুরবানির হাটে গরু-ছাগল ও মহিষের দাম গত বছরের তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ কম।
জেলায় এ বছর কুরবানির হাটে প্রায় দুইশ কোটি টাকার গরু-ছাগল কেনা-বেচার সম্ভাবনা ছিল। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের আশঙ্কা ছিল করোনা সংকটের কারণে তা বেশ কম হতে পারে।
পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্ত আল-মামুন হোসেন জানান, গত এক দশক ধরে পাবনায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু মোটাতাজাকরণ বেড়েছে।
তিনি জানান, মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন ষাঁড় পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে, কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলেছেন বলে তিনি জানান। এরা সাধারণত এক বছর পর পোষা গরু বিক্রি করে দেন।
অনেকে দু’বছর পর্যন্ত লালন-পালন করে থাকেন। ষাঁড়গুলো পবিত্র ঈদুল আজহার সময়েই সাধারণত বিক্রি হয়।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জেলায় প্রায় ২১ হাজার খামারি রয়েছেন, যারা গাভি ও ষাঁড় পালন করেন। আরও অন্তত ২০-২৫ হাজার ক্ষুদ্র কৃষক নিজ উদ্যোগে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন।
এছাড়া জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার হতদরিদ্র মহিলা এনজিও’র টাকায় গরু পালন করে থাকেন। খামারি, ক্ষুদ্র কৃষক ও হতদরিদ্র গৃহিণীর পালন করা গরু মিলিয়ে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার গরু কুরবানির হাটে উঠবে।
এদিকে প্রায় ৪০ হাজার ক্ষুদ্রচাষির এক লাখ ১৫ হাজার হাজার ছাগল- ভেড়াও বাজারে উঠবে। সব মিলিয়ে দুই লাখ ৩৫ হাজার থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার গরু-ছাগল- ভেড়া বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গড় দাম হিসেব করে পাবনা থেকে প্রায় ২শ থেকে ২শ বিশ কোটি টাকার গরু- ছাগল বিক্রির টার্গেট ছিল। তবে করোনা সংকটে কারণে দাম ২০-২৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় এ লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে বলে প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম গরু হাট ঈশ্বরদীর অরোনখোলা হাটে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, গরু, ছাগল, মহিষ হাটে উঠলেও কেনার লোক খুব কম।
ঢাকায় গরু সরবরাহকারী ব্যাপারীদের দেখা নেই। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় যেসব ব্যাপারী কয়েক মাস আগে গরু কিনে রেখেছিলেন তারাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
মাহমুদপুর গ্রামের মোন্তাজ আলী মোল্লা জানান, তিনি দুটি ষাঁড় নিয়ে হাটে এসেছেন। কিন্তু খুবই কম দাম হচ্ছে।
তিনি জানান, গত বছর লাখ টাকায় যে গরু বিক্রি হয়েছে এবার তার দাম ৭০- ৭৫ হাজার টাকা। এতে খামারি, ক্ষুদ্র কৃষক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ হিসেবে জানান, গোখাদ্যের দাম প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।
রোকন বিশ্বাস নামের এক ছাগল বিক্রেতা জানান, তিনি হাটে এসে ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না। দাম খুবই কম। জানালেন, গত বছরের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ দাম কম। অথচ দাম আরও ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া উচিত ছিল।
শাহীন রহমান নামের এক তরুণ ছাগল ব্যবসায়ী বলছিলেন, তিনি দুটি খাসি নিয়ে এসেছেন অনেক্ষন আগে। এ সময়ের মধ্যে কেউ দামই বলেনি।
তিনি জানান, গত বছর যে খাসির দাম ছিল ১৩- ১৪ হাজার টাকা এবার সে খাসির দাম ৮-৯ হাজার টাকা।
বেচা-কেনা কম ও দাম কম হওয়াতে হাট ইজারাদারগণও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবুল হোসেন নামের এহজন হাট ইজারাদার জানান, দাম কম হওয়ায় তারাও ক্ষতিগ্রস্থ।
কারণ হিসেবে জানান, প্রতিযোগিতা করে তারা হাট ডাকে অংশ নেন। কুরবানির মৌসুমে হাটের খাজনা আদায়ে তাদের বিনিয়োগ করা বিরাট অংশের টাকা উঠে আসে।
এবার দাম যত কম হবে কিম্বা বিক্রি যত কম হবে তাদের খাজনা আদায় তত কমে যাবে।
ছবিটি তোলাহয়েছে পাবনা সুজানগর পৈার বাজার হাট থেকে । হাসান ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি
যোগাযোগ:01763-026187
Leave a Reply