ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধিঃ
১৪ আগস্ট ২০২০ইং
নবীনগরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ!
ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাময়িক বহিস্কার হওয়া প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ের নগদ ৭ লক্ষ ৯২ হাজার, মসজিদের ৩ লক্ষ ৫০ হাজার, দোকান ঘরের জামানত ১ লক্ষ ৫০ হাজার, দোকান নির্মাণে অতিরিক্ত ৫৯ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো, অনুমোদন বিহীন খরচের ভাউচার ৫২ লক্ষ ৫৩ হাজার ২২১ টাকা, অনুমোদন বিহীন বেতন বৃদ্ধি ৮০ হাজার ১০০ টাকা, উপবৃত্তির টিউনশন ফি ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা সহ মোট ১ কোটি ২৯ লক্ষ তিনশত একুশ টাকা অনিয়ম ও আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছে সরকারী অডিট কমিটি।
জানা যায়, ১৯১৩ সালে নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামে বাবু অমর চন্দ্র ভট্টাচার্য বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের পদটিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকায় সরকারী নিয়মমোতাবেক প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর ২০১৬ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েও প্রভাব খাটিয়ে মো. রফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন ঘটনায় হয়েছেন আলোচিত সমালোচিত। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ওই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত ক্লাসে ইংরেজি পড়া না পাড়ায় শিক্ষকের বেত্রাঘাতে চোখ নষ্ট হওয়ার ঘটনা গত ২৪ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে সাময়িক বহিস্কার ও ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর ৮ মে ২০১৯ পুলিশ তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন থেকে গ্রেফতার করেন
এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ হতে থাকে। ২০১৯ সালের বিদ্যালয়ের ৫ সদস্যর অভ্যন্তরীন অডিট প্রতিবেদন ও ২০২০ সালের নবীনগর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত অডিট কমিটির প্রতিবেদনে বেড়িয়ে আসে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। ম্যানেজিং কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোকাররম হোসেন ও উপজেলা সমবায় অফিসার মো. গোলাম মহিউদ্দিনকে নিয়ে গঠিত অডিট কমিটি ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয়/ব্যয়ের অডিট শেষে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের হাতে থাকা বিদ্যালয়ের নগদ ৭ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা যা এখনো জমা হয়নি, দোকান ঘরের জামানত ১ লক্ষ ৫০ হাজার, দোকান নির্মাণে অতিরিক্ত ৫৯ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো, অনুমোদন বিহীন খরচের ভাউচার ৫২ লক্ষ ৫৩ হাজার ২২১ টাকা, অনুমোদন বিহীন বেতন বৃদ্ধি ৮০ হাজার ১০০ টাকা, উপবৃত্তির টিউনশন ফি ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকাসহ মোট ১ কোটি ২৯ লক্ষ তিনশত একুশ টাকা অনিয়ম/আত্মসাৎ করেছে বলে বিল ভাউচার যাচাই বাছাই শেষে এ সব প্রমান পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয় মসজিদ খাতের ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দুই বছর পর কমিটির চাপে জমা দিলেও অনান্য খাতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বার বার কমিটির পক্ষ থেকে বলা হলেও জমা দেয়নি মো. রফিকুল ইসলাম।
প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সফিকুর রহমান বলেন, প্রশাসন কর্তৃক বিদ্যালয়ের অডিট প্রতিবেদনে যে সব অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয় উঠে এসেছে, সে সব বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে শত বছরের পুরনো এ বিদ্যালয়টিকে কলংক মুক্ত করা হবে।
বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন অডিট কমিটির আহবায়ক আবদুল হান্নান বলেন, আমরা যখন অডিট করেছি তখনও প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য প্রমাণ পেয়েছিলাম।
এবিষয়ে জানতে সাময়িক বহিস্কার হওয়া ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিনিয়ম ও আত্বসাতের সত্যতা পেয়েছি অডিটে। অডিট প্রতিবেদনটি ইউএনও স্যারের কাছে জমা দেওয়ার পর তিনি যাচাই-বাছাই করে একতম পোষণ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষক এসব অনিয়ন ও অর্থ আত্মসাতের জড়িত থাকা খুবই দুঃখ জনক ঘটনা।
একটি সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের মার্কেট ও বাউন্ডারী নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজের সাথে কমিটির লোকজনও জড়িত রয়েছে, তাড়াও এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারেননা।
Leave a Reply