গাজীপুরের কাশিমপুরে পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্বামীকে দুধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী ও প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হত্যার পর নিহতের মরাদেহ আলাদা আলাদা স্থানে ৬টুকরো করে ফেলে দেয় অভিযুক্তরা, হত্যাকান্ডে ব্যবহারিত প্রমাণ লোপাট করতেই তাঁরা এমনটি করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ। ৩০/০৫/২০২১ইং রোববার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং করে, উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ জাকির হাসান, বিস্তারিত জানান। ২৯ মে শনিবার ভোরে এ ঘটনায়, আরিফা বেগম (২৪) ও তনয় সরকার (৩১) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। (আরিফা বেগমের স্বামী হলেন নিহত সুমন মোল্লা (২৮), পিতা- জাফর মোল্লা, সাং- গোলা বরন্নী বাজার, থানা- চিতলমারি, জেলা- বাগেরহাট)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নিহত সুমন মোল্লার স্ত্রী আরিফা বেগম(২৪) পিতা- আশরাফ আলী, সাং- নারায়ণ পুর, থানা- চিরিবন্দর, জেলা- দিনাজপুর। ও তনয় সরকার (৩১), পিতা- আদিত্য সরকার, সাং নরকোনা, থানা- মধুখালী, জেলা- ফরিদপুর। উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ জাকির হাসান জানান, গত ২১ এপ্রিল শুক্রবার গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকায় জামাল উদ্দিনের সেপটিক ট্যাঙ্কে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির হাত-পা-মাথা বিহীন মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কাশিমপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল অন্যত্র হত্যা করে কেউ মরদেহটি এখানে ফেলে গেছে। পরে স্থানীয় বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার সাতদিনের ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে উদ্ধার করা মরদেহটি এ এলাকারই কারো। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট পুকুরপাড় ময়লার স্তুপ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত উদ্ধার করা হয়। এরপর একই এলাকার তেতুঁইবাড়ি মোজার মিল সংলগ্ন ময়লার ভাগাড় থেকে নিহতের খণ্ডিত পা ও মাথাসহ পাঁচ টুকরো দেহাংশ গলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি গ্রেফতারকৃত তনয় সরকারের বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ জাকির হাসান, গ্রেফতারকৃতদের বিবরন দিয়ে আরো জানান। দেড় বছর আগে সুমন বিয়ে করেন আরিফাকে। নিহত সুমন মোল্লা স্ত্রী সহ কাশিমপুরের সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট এলাকায় স্থানীয় শফিউল্লাহর বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। নিহতের স্ত্রী আরিফা বেগম ও তাঁর প্রেমিক তন্ময় সরকার তাঁরা উভয়েই একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। বিয়ের আগেই আরিফা বেগমের প্রেম ছিল তনয়ের সঙ্গে। বিয়ের পরও তাদের প্রেম চলতে থাকে। বিষয়টি টের পেয়ে সুমন তার স্ত্রী ও তনয়কে একাধিকবার শাসন ও মারধর করেন। এ ঘটনার পর তাঁরা দু’জন মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ১৯ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ১০:টায় আরিফা সুমনকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয় তার পর সুমন ঘুমিয়ে পড়লে, আরিফা তনয়কে ডেকে আনে। এরপর রাত ১২:টায় বালিশচাপা দিয়ে, আরিফা ও তনয়, সুমনকে হত্যা করে ঘরেই রেখে দেন। পরের দিন করাত দিয়ে সুমনের মাথা, দুই হাত ও দুই পা বিচ্ছিন্ন করে এবং চাপাতি দিয়ে পেট কেটে ফেলেন। নিহতের হাত, পা ও মাথাবিহীন শরীর আরিফার ব্যবহৃত কাঁথা দিয়ে মুঁড়িয়ে পার্শ্ববর্তী জামাল উদ্দিনের বিল্ডিং এর সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেয় এবং দেহ হতে বিচ্ছিন্ন করা পাঁচটি অংশ পলিথিন মুঁড়িয়ে চক্রবর্তী তেঁতুইবাড়ী মোজার মিল সংলগ্ন ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দেন, আরিফা বেগম ও তনয় সরকার। সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা।
Leave a Reply