আর কতো খেলা চলবে এই নিরিহ প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে ?
পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন ছেড়ে, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, বিদেশে পাড়ি জমায় একটু সুখের আশায় ।
অথচ বৈধ ভিসায় আসার পরেও বিনা অপরাধে, কর্মহীন, আকামা বিহীন,অপরাধী হয়ে, কখনো জেল-হাজতে নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করে,এমনকি অনেক ক্ষেত্রে লাশ হয়েও দেশে ফিরতে হয় ।
একজন বৈধ লোক অপরাধ না করা সত্ত্বেও কি করে তাকে অবৈধ বলা যায় । এটা কৃতদাস প্রথার চেয়েও জঘন্য একটা অপরাধ বলে মনে করি ।
অবৈধ শ্রমিক কারা । যে বা যাহারা কফিল বা ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা কোম্পানি থেকে পলাতক হয়তোবা ৫০/১০০ জন এবং চুরি কিংবা সামাজিক কিছু অপরাধের কারণে জেল জরিমানা সহ যাদের সাজা হয়েছে ৫০/৬০ জন হবে । আর আকামা বিহীন কাজের সময় অথবা রাস্তায় চেকে যারা ধরা পড়েছে হয়তোবা ১৫০/২০০ জন হবে । এরা হয়তো হাতে গোনা সর্বমোট ৩০০/ ৫০০ জন হবে । এ সকল লোকজন সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়লে দেশে ফেরত নেয়া অথবা পাঠানো যেতে পারে ।
এছাড়া বাকী শ্রমিকগন যাদের আকামা লাগে নাই অথবা লাগানো হয় নাই,তারা অবৈধ নয় কিন্তু তারা সকলেই পরিস্থিতির শিকার । এরজন্য দায়ী কে ?
অথচ একই কাজের জন্য আনা শ্রমিক আকামা না লাগিয়ে অবৈধ বলে ফেরত পাঠিয়ে আবার নতুন করে ভিসা বিক্রির মাধ্যমে শ্রমিক আনা হচ্ছে । এটা কোন ধরনের মানবতার পরিচয় বহন করে ?
আমি মনে করি এরজন্য দায়ী মালিক পক্ষ এবং কিছু ভিসা ব্যাবসায়ী আর উভয় দেশের প্রশাসনের কিছু লোকজন এবং দুর্বল ব্যাবস্থাপনা ও গাফিলতির কারণ । উভয় দেশের সরকারী প্রতিনিধিগণ সকল ঘটনা জানা সত্ত্বেও আলোচনা সাপেক্ষে এর সমাধান না দিয়ে শুধু সাধারণ শ্রমিকদের বিনা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করার অর্থ হলো অমানবিক এবং অমানুষিকতার পরিচয় বহন করার শামিল বলে মনে করি ।
পৃথিবী মানবের আবাদী স্থল । মানব বেঁচে থাকলে পৃথিবীতে আবাদ হবে । মৃত্যু মানবের নির্ধারিত ।এটা জানা সত্ত্বেও আমরা কেনো মানবতার দৃষ্টিকোন কোন থেকে তাদের ন্যায্য পাওনা এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত করি ?
একটি নিউজ দেখতে পেলাম । কুয়েত সরকার নাকি বাংলাদেশের সরকারকে চাপ প্রয়োগ করেছে, অবৈধ লোকজন না নিলে অন্যদের আকামা নবায়ন করা হবেনা । জানিনা কথাটা কতোটুকু সত্য । তবে বিদেশ নীতিতে এ ধরণের শব্দ ব্যবহার করা যায় কিনা অথবা করাটা কতোটুকু যুক্তি সঙ্গত এবং শোভনীয় কিনা তা’আমার জানা নেই । এতে বুঝা যায় জাতিগত ভাবে আমরা মেরুদন্ডহীন ।
আমাদের দেশের মন্ত্রী, এমপি এবং প্রশাসনিক কর্তাদের জবাব দেয়ার মতো সে ক্ষমতা টুকু আছে কিনা জানিনা । আমার দেশের বৈধ শ্রমিক আনার পরে, তোমার দেশে আকামা না লাগিয়ে অবৈধ বানিয়ে জেল জরিমানা করে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে আবার নতুন ভিসা বের করে শ্রমিক এনে পুনরায় সমস্যার সৃষ্টি করা হচ্ছে । আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর সুষ্ঠ সমাধান চাই এবং উভয় দেশের সুনাম বজায় রেখে সম্পর্ক অটুট রাখতে চাই । এর পরেও যদি সঠিক সমাধান না হয় । সোজা বলে দেয়া ভাই, আমাদের সম্পর্ক বজায় থাকুক । কিন্তু আমাদের দেশ থেকে নতুন করে কোনো শ্রমিক আমরা পাঠাবো না ।
সরকারকে অনুরোধ করবো । দয়া করে বিদেশীর নিকট নিজের জাতিকে হেয়পন্ন করবেন না । ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় বাঙালী দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো জীবন রক্ষার জন্যে । তাই বলে কি বাঙালি না খেয়ে মারা গেছে অথবা সরকার প্রবাসীদের কোনো অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে । প্রবাসীরা নিজেরাই তাদের জীবন-জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে ।
কুয়েতে মাত্র তিন লক্ষ লোক । এরা দেশে ফেরত গেলে না খেয়ে মারা যাবে না । আল্লাহ যার রিজিক যেখানে রেখেছে সে সেখানেই খাবে । তবে সরকার বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের বিনা সুদে ২৫/৫০ লক্ষ টাকা লোন প্রদান করে তাদের সুষ্ঠ ভাবে চলার সুযোগ দিলে প্রবাসের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির জন্য সুফল বয়ে আনতে পারবে বলে আমার ধারনা । অন্যদিকে সরকার প্রবাসীদের স্বার্থে উপজেলা ভিত্তিক নানা শিল্প, কল-কারখানা গড়ে তুলতে পারেন ।
যাই হোক। বিশ্ব করোনার এই মহামারির দুর্যোগ মুহূর্তে আমার লেখার চিন্তা-ভাবনা ছিলোনা এবং উচিতও নয় । কিন্তু প্রবাসিদের নিয়ে আন্তঃমন্রনালয়ের বৈঠকের নিউজ পড়েই বাধ্য হলাম লিখতে । পরবর্তীতে প্রবাসীদের নিয়ে বিস্তারিত লিখবো ।
পৃথিবীর এই করোনা মহামারির হাত থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
(আমীন)
লেখক – রফিকুল ইসলাম ভুলু।
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কবি, সাহিত্যিক ও লেখক।
দাইয়ানুর রহমান মিষ্টারনুর
জাতীয় মানবাধিকার বাস্তবায়ন সাংবাদিক সোসাইটি প্রেসিডেন্ট কুয়েত শাখা
মফিজুর রহমান
বাংলাদেশ সাংবাদিক ক্রাইম সংগঠন প্রেসিডেন্ট কুয়েত শাখা
Leave a Reply