মোঃ মোশারফ হোসেন
কাউনিয়া রংপুর প্রতিনিধিঃ
তিস্তা নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াশাম নামক স্থানে গিয়ে দেখলাম কয়েক টি বাড়ি ভাংতেছে জিজ্ঞেস করতেই মধ্যবয়সী আমেনা নামের এক নারী বললেন, আমার সোগ নদীত ভাসি গেইচে। কোন্টে থাকমো?পাগলা তিস্তা নদী হামার বাড়িঘর ভাঙ্গি নিছে। একটু সামনে গিয়ে দেখি অন্যের উঠানে বেশ কয়েক টি পরিবার আবসবাপত্র বেড়াটাটি নিয়ে ঠাঁই নিয়েছে। আরও অনেক ঘরের চাল, বেড়াসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাখুসে তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।ওই নারীর অশ্রুচোখের দিকে বেশিক্ষন তাকাতে পারলাম না। এই কষ্ট যদি আমাদের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের কিংবা সরকারের কর্তারা উপলব্ধি করতেন, তাহলে তাঁরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন। যাঁদের হাতে সমাধান, তাঁরা থাকেন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাড়ীতে? নদী-তীরবর্তী বাস্তবতা থেকে হাজার কিলোমিটার অদূরে। বলছিলাম রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম গ্রামের মানুষের দুঃদূরদসার কথা। প্রায় দেড় হাজার বাড়ি চলতি বর্ষায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও কত এলাকা এবার নদীগর্ভে বিলীন হবে তা অনুমান করা সম্ভব না। চর গতিয়াশাম,চর নাখেন্দা,বুড়ির হাট, চর বড়দরগা,গ্রামের ওপর দিয়ে এখন তিস্তা নদী প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারের হয়ে যেন এ সব গ্রামের অসহায় মানুষ গুলোর খোঁজ খবর নেওয়ার কেউ নেই। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মিনহাজুল ইসলাম বললেন, নদী তো এমনিতেই ভাঙ্গে কারন হলো নদীর গভিরতা কম। সেই জন্য বেশি ভাংতাছে আমার ধারনা। দেখলাম, নদীর কিনারে কয়েকটি ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করা হয়েছে। একটি ঘর ভাঙা বাকি। সেটি খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই দিন তাদের বাড়িতে থাকার শেষ দিন ছিল । পাশেই আরো অনেক বাড়ি ছিল, তাঁরাও চলে গেছেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখা আবার সেই মধ্যবয়সী নারী কে সে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চলছেন নতুন ঠিকানায়। যাওয়ার আগে বারবার ভাঙ্গা বাড়ির উঠানের দিকে তাকাতে তাকাতে অস্রচোখে। চর নাখেন্দায় দেখা হলো ৫ নং ওয়ার্ড সাবেক উইপি সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম এর সাথে তিনি বলেন, তিস্তা নদীটি কখন কী আচরণ করে বলা খুব কঠিন। কোনো অনুমানই করা যায় না, আমি সরকারের কাছে জোড়দাবী জানাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের।গত বছর রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার নদীর তীরবর্তী একটি স্থানে গিয়ে দেখেছিলাম, অনেকগুলো বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে, সেখানেই আবার বিশাল চর জেগে উঠেছে, পথিমধ্যে দেখা হলো ৮ নং ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা মামুনুর রশিদ (মামুন) তাকে জিজ্ঞেস করতেই অস্রচোখে বললেন, পাশেই ৩ টা গ্রাম ছিল চরগতিয়াশাম,চর কিতাবখা,চর নাকেন্দা, চর বড়দরগা,কয়েক দিনেই পুরো গ্রাম গুলো নদীতে চলি গেইচে। কয় দিন পর আবার ওই জাগাতে চর জাগি উঠচে।
এ বছর কুড়িগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টি কম ছিল। উজানের ঢলে পানিও আসে কয়েক দিন পরপর। পানি কম হলেও ভাঙ্গন কমে নাই, বরং কিছুটা বেশি ভাঙ্গনের আতংক রয়েছে, প্রতিবছর যেভাবে বাড়িঘর ভাঙ্গছে, কত আবাদি জমি যে নদীতে গেছে তার কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছেও নেই । আমার অনুমান , ১ থেকে ৩ হাজার ঘর বাড়ি বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । লাখ লাখ গাছ ভেসে যাচ্ছে তিস্তা নদীতে। বলতে গেলে ক্ষতির অর্থমূল্য শত শত কোটি টাকা।এ বছর বর্ষার শুরুতেই বুড়ির হাট এসপার বাধটি ২৬ তারিখে সামনের একাংশ ভেঙ্গে পড়ে এখন এ এলাকার মানুষের ভাগ্যে যে কি আছে তা আল্লাহ তাআলা জানেন,নিউজ হচ্ছে তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান, ব্যাংকার সাজু সহ হাজারো সাধারণ মানুষ বিভাগীয় শহর রংপুর এ কয়েকবার সমাবেশ করেছে খরস্রোতা তিস্তা নদী খননের দাবি তুলে। এখনো তারা হাজারো ভিটেমাটি হাড়া মানুষের দাবি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছে।
Leave a Reply