কোরোনা ভাইরাস নিয়ে নানা ভাবে মানুষ কে সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে এর ভয়াবহতা চারদিকে ছড়িয়ে না পড়ে এবং আমরা যেনো আতংকিত না হয়ে সচেতন হই সাথে সাথে অন্য কেউ সচেতন করি। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা যারা এ কাজের সাথে যুক্ত তারা কতটা সচেতন ও নিজেকে কতটা সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে রাখতে পারছি।
যেমন :
ইলেকট্রনিক মিডিয়া : কোরোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।রিপোর্টারগন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ দিয়ে যাচ্ছেন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় – যিনি সংবাদ পাঠ করছেন তাঁর পেছনে সহকর্মীরা পাশাপাশি এমনকি মুখোমুখি বসে কাজ করছেন, এ তো আমরা যা দেখছি, ক্যামেরার পিছনে ও অনেকেই আছেন, তাঁরা কিভাবে নিজেদের নিরাপদ রাখছেন, সচেতন মূলক বার্তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো – গন জামায়েত এড়িয়ে চলা, । টিভিতে আরেকটি অনুষ্ঠান হচ্ছে টকশো, এখানে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তারা যে কোরোনা ভাইরাস এআক্রান্ত নয় এ ধরনের কি কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন কিনা, এব্যাপারে সঞ্চালকের কাজ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না, তাদের মাধ্যমে ও সঞ্চালক যেমন আক্রান্ত হতে পারেন আবার সঞ্চালক এর মাধ্যমেও অতিথিরা আক্রান্ত হতে পারেন। সচতনা মূলক অনুষ্ঠান প্রচারের সময় নিজেরা কতটুকু সচেতন, কতটুকু সুরক্ষা ব্যবস্থা নিজে নিয়েছেন সেই সাথে মিডিয়া অফিসগুলোতে কর্মীদের জন্য কি ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে তা দর্শক দের দেখালে কিংবা জানালে এর গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে। এখানে উল্লেখ্য যে কোরোনা ভাইরাস এর প্রভাবে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে কিন্তু যিনি এ খবরটি জানাচ্ছেন তার মাঝে কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, তিনি শতশত মানুষের মাঝে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন এবং তা আমাদের জানাচ্ছেন। এদের জন্যে প্রতিষ্ঠান থেকে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়ছে, যেহেতু বাজারে কে কোরোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত এটা পরীক্ষা করা কোন ব্যবস্থা নেই, তাই তাদের ও ঝুকি থেকে যায়। কেননা এরাও আমাদের কারো না কারো বাবা, মা, ভাই, বোন ও আত্মীয় স্বজন।
ডাক্তারগণ : নিঃসন্দেহে তাঁরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যে মানুষটা ডাক্তার এর কাছে যাচ্ছেন তিনি কিংবা ডাক্তার উভয় ব্যক্তিই যে নিরাপদ তার কি কোন বুঝার উপায় আছে । ডাক্তার’রা ই বা নিজেদেরকে কতটুকু সুরক্ষায় রেখেছেন , যে আক্রান্ত রোগী এলে সে নিরাপদ থাকবে কিংবা একজন নিজের সন্দেহ দূর করতে ডাক্তার এর কাছে গেলেন সে যে ডাক্তার এর মাধ্যমে আক্রান্ত হবে না তার কি কোন গ্যারান্টি আছে, এজন্য অবশ্যই সকল ডাক্তার এর চেম্বার এর সামনে তার মেডিকেল রিপোর্ট ঝুলিয়ে রাখা উচিত। কেননা ডাক্তারা ও যেমন আমাদের কারো না কারো বাবা, মা,ভাই বোন ও আত্মীয় স্বজন। তেমন যিনি সেবার জন্য গেলেন তিনিও তদ্রূপ। উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরী।
প্রশাসন : প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কে সুরক্ষার মধ্যে থাকা উচিত, বিদেশ থেকে কে এলো এদের কে দলবল নিয়ে খুঁজতে গিয়ে যে নিজেরা আক্রান্ত হবেনা তার কি বুঝার কোন উপায় আছে, কেননা বিদেশ থেকে ফেরত কারো মাঝে এ রোগ বাসাবেদে আছে কি না তা আপনারা জানেন না, কাজেই নিজেরা আগে সচেতন হয়ে সুরক্ষিত অবস্থায় বিভিন্ন জায়গায় পরিদর্শনে যাওয়া উচিত, আবেগ তাড়িত হয়ে কিংবা অতি উৎসাহী হয়ে কিংবা নিজেকে জাহির করতে গিয়ে কিংবা মহৎ সাজতে গিয়ে ভুলকরবেন না, এতে করে সংক্রমণ কমবে না, ছড়াবেই বেশী। কেননা আপনাদের ও পরিবার পরিজন আছে, নিজে নিরাপদ থাকুন পরিবার ও সমাজকে নিরাপদ রাখেন। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা যারা দায়িত্বে আছি তারাই সচেতন হচ্ছি না।
রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ : রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে বিপদে জনগনের পাশে দাঁড়াবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই গন জামায়েত হয় এমন অনুষ্ঠান পরিহার করে, নিজে সচেতন হোন কর্মীদের সচেতন করোন । এখানে আবেগের কোন স্থান নেই, নিজেদের জনপ্রিয়তা জাহির করারও সময় এটা নয়। কাজেই নেতাকর্মীদের ও জনগণকে বুঝানোর আগে আপনি যে সচেতন তা বুঝান, মিডিয়াতে কথা বলার সময় এক দল কর্মীনিয়ে কথা বলছেন আর বলছেন আপনারা ভিড়ের মধ্যে যাবেন না অথচ নিজেই ভিড়ের মধ্য থেকে কথা বলছেন। নিজেকে নিরাপদ রাখুন, তাহলেই পরিবার নিরাপদ থাকবে, থাকবে সমাজ ও দেশ।
ব্যাংকিং খাত: মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রমের সাথে ব্যাংক অতুপ্রতু ভাবে জড়িত। গ্রাহকগনের প্রাত্যহিক চাহিদা মেটানোর জন্য তাদের ব্যাংক এ আসতে হয়।পৃথিবী বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যাংক বন্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও গ্রহকগণকে সেবা দিতে হয়। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় বুঝা খুব দুঃসাধ্য, যে গ্রাহকগন টাকা জমা বা উত্তোলন করতে এলেন তিনি কোরোনা ভাইরাস মুক্ত, শুধু মাত্র হেক্সাসল দিয়ে হাত মুছলেই নিরাপদ রয়ে গেলাম একটি ভাবার কোন কারন নেই। কাজেই এখানেও একটি সুনিদিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। কিভাবে কর্মকর্তা ও গ্রাহক উভয়েই নিরাপদ থাকতে পারে। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত এর লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।
বাজার ব্যবস্থা : এখানে আমরা কতটা সচেতন ও সুরক্ষিত। আমরা কেউ জানিনা এখানে কে আক্রান্ত, ক্রেতা না বিক্রেতা। কিন্তু নিত্য পণ্যের চাহিদা মেটাতে বাজারে না যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। অথচ এ বৃহত ব্যবস্থাপনায় কতটুকু সচেতনতা দরকার কিংবা সুরক্ষিত করা দরকার এ ব্যপারে এখনো পর্যন্ত কোনো দিকনির্দেশনা ব্যবসায়ীক মহল থেকে আসেনি।
ধর্মীয় কার্যকলাপা : এখনো আমরা জানাজা নামাজে দলে দলে শরিক হচ্ছি, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছি না, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে মহামারি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছি, মাহফিলে দল বেঁধে অংশ নিচ্ছি, মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য উৎসাহিত করছি। আসলে এখানে কে যে করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত আমরা কেউ জানিনা। কেউ ই নিজেদের নিরাপদ রাখছি না। এব্যপারে ধর্মীয় বিজ্ঞ জনদের কাছ থেকে সুন্দর ও সুস্পষ্ট নিকনির্দশনা দেখা যায় নি।
শুধু নিজেদের জাহিরি করা ছাড়া। খুব কমসংখ্যক এর ব্যতিক্রম। প্রকৃত পক্ষে কুরআন ও হাদিসে মহামারি সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা গুলো আলেমগন সে ভাবে প্রচার করছেন না। যার দ্বারা হমানুষ সচেতন হতে পারে। আময়রাই আমাদের বিপদের জন্যে দায়ী।
কোরোনা ভাইরাস এর ব্যপকতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের অসচেতনা, উদাসীনতা, দায়িত্বশীল আচরণ না করাই দায়ী।
বি:দ্র: আমরা প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যাই, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকি ,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া দিকনির্দেশনা গুলো মেনে চলি। “কয়েকটা দিনের অসামাজিকতা বাঁচাতে পারে পুরো জাতিকে”। “আল্লাহতালা অবশ্যই সবাইকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। আমীন
Leave a Reply