শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০০ অপরাহ্ন

কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে প্রিয় মাতৃভূমি টেকনাফের সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশ্যে কিছু কথা! ? Matrijagat TV

সাইফুদ্দীন আল মোবারকঃ
  • আপডেট টাইম শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

প্রিয় এলাকাবাসী,

আসসালামু আলাইকুম।
আপনাদের সন্তান হিসেবে আমার ছোট্ট আকুতি আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। আমার মাতৃভূমি প্রিয় টেকনাফের/হোয়াইক্যং এর সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে দুয়েকটা কথা বলছি। পবিত্র রমজান মাসের আগমনী মোবারকবাদ জানাচ্ছি। রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের এই মহিমান্বিত মাসের শুরুতে আমরা চরম পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। বিশ্ববাসী আজ কঠিনতর পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। অস্ত্র-গুলিবিহীন, সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের এই যুদ্ধে বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলো ও তাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান পরাজিত হয়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুর কাতারে শামিল হয়েছে। মানব জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। চতুর্দিকে হাহাকার। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থাও আশঙ্কামুক্ত নয়। গত ১৫ দিন আগেও আমাদের দেশের সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। জমিতে সার ছিটিয়ে দেয়ার মতো আমাদের মাঝে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। যিনি রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তার সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয় মা, বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী, সন্তান সহ সবাই তার দেখাশোনা, সেবাযত্ন করা থেকে বিরত থাকে। এমনকি মৃত্যু পরবর্তী তার লাশ গ্রহনেও অনিহা প্রকাশ করছে। সবই আপনারা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারছেন। আপনাদের অজানা কিছুই নেই। প্রতিনিয়ত স্থানীয় প্রসাশন, থানা/ফাড়ি/তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, সেনাবাহিনী, সেবাদানকারী সংস্থা বা অন্য কোন ভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে ও সচেতন হতে বিভিন্ন প্রচরণা চালিয়ে যাচ্ছে। আপনি/আপনারা হয়তো ভাবছেন, এমন কিছু আমাদের এখানে হবে না। আল্লাহর দোহাই এমনটা ভাববেন না। আমার কর্মস্থল পাহাড়তলী থানা এলাকার শিক্ষণীয় ঘটনা থেকে বলতে পারি, বৃদ্ধলোক আক্রান্ত হলে, তার আত্মীয়-স্বজন কাউকেই পাওয়া যায়নি শুধুমাত্র গাড়িতে উঠিয়ে দেয়ার জন্য। শূন্য থেকে ৩/৪ দিনের মধ্যে ১২ জন করোনা রোগী পাওয়া যায়, যার মধ্যে মৃত্যু ২ জন বরণ করেছে। অবশিষ্ট রোগীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদের মনোবল ও সাহসিকতা বৃদ্ধির জন্য আমরা অভয় দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ মঈনুর রহমান MD Mainur Rahman মহোদয় প্রতিনিয়ত তাদের পরিবারে খাবার দাবার সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগানের ব্যবস্থা করছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে ইতিমধ্যে ২/৩ জন সুস্থতা লাভ করেছে। বাকিরাও সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা করছি ইনশাআল্লাহ। আপনারা দয়াকরে আর অবহেলা করবেন না। খারাইগ্যা গোনা, হ্নীলা, পাশ্ববর্তী এলাকা তুমব্রুতেও করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। আমরা যারা এলাকার বাইরে আছি বিশ্ববাসীর এই চরম দুঃসময়ে করোনা পরিস্থিতির ক্রান্তিকালে বার বার মনে পড়ছে মাতৃভূমির কথা, আপনাদের কথা। মনে পড়ছে অগাধ ভালোবাসা ও মমত্ববোধে পেরিয়ে আসা শিশু কিশোরে বেড়ে উঠা হাজারো স্মৃতি বিজড়িত এই মাতৃভূমির মানুষগুলোর কথা। মনে পড়ছে প্রিয় এলাকাবাসী মুরব্বিদের, যাদেরকে আমার বাবার সংস্পর্শে বার বার দেখেছি।

আমাদের গ্রামের পারিপার্শ্বিক অবস্থা আপনারাই অবগত আছেন। চতুর্দিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় তার অপরিকল্পিত জীবন ব্যবস্থা আমাদের/আপনাদের জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে করোনা পরিস্থিতি কোন ভাবেই অবহেলা করার নয়। একমাত্র আল্লাহ সহায় হলেই আমরা রক্ষা পাব। আপনাদের এত বেশি কিছু করতে হবে এমন নয়। শুধু ঘর থেকে বের হবেন না। পাশাপাশি সচেতন হয়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিধিনিষেধ মেনে চলুন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নামাজ ও ইবাদতের জন্য কেউ মসজিদে জটলা বানাবেন না। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলবেন। আপনারা এসব নিয়ম না মানলে কেউ জোর করে আপনাকে এটা বাধ্য নাও করতে পারে। কারণ, আপনার থানা/তদন্ত কেন্দ্রে যারা আছেন, তারাও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছেন। আমাদের মতো শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজ বাড়িতে বা পরিবারের কাছে গিয়ে থাকতে পারছে না। যারা সেবাদানকারী সংস্থা রয়েছেন তাদের মধ্যে গতকালের তথ্য অনুযায়ী, সারা বাংলাদেশে পুলিশ সদস্য ২১৭ জন, স্বাস্থ্যকর্মী ১৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কতজনকে নিষেধ করবে? আমরা মহানগর এলাকায় ছোট্ট এলাকাতে কাজ করেও সব মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হচ্ছি না। নিজে থেকে আপনাকে আপনার স্বার্থে মানিয়ে চলতে হবে। আগে যেভাবে বড় বড় মাছ, মাংস ও ভাল ভাল খাবার খেয়েছেন তা বজায় রেখে চলার দরকার নেই। কোন রকম আলু ডাল খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখবেন। তারা যেন না খেয়ে মারা না পড়ে। যতক্ষন থাকবে মিলেমিশে চলতে হবে। অসহায়দের জন্য মানবিক হোন। আল্লাহর দরবারে চলমান করোনা ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রার্থনা জানাই। দোয়া চাই আপনাদের কাছে। আমাদের কেউ করোনা পজিটিভ হয়ে মৃত্যুবরণ করলে আপনাদের কাছে ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, পৃথিবীর সুস্থতা ফিরে আসলে আবার দেখা হবে প্রিয় মাতৃভূমিকে, মাতৃভূমির প্রিয় মানুষগুলোকে।

পরিশেষে, আপনাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করছি, অতি জরুরী প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘর থেকে বাইরে যাবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনা পজেটিভ হোক আর নেগেটিভ হোক, নিয়মিত আদা, লবঙ্গ, এলাচি, দারুচিনি ও লেবু পানির ভাপ নিতে থাকুন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার বেশি করে খান।
করোনা পজেটিভ হলেও ভয়ের কোন কারণ নেই, ঠুনকো চিকিৎসা দিয়ে, আল্লাহর রহমত ও মনোবল দিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার ঘটনা অনেক রয়েছে। নিজেকে নিরাপদ ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চান। ঘরে বসেই নামাজ আদায় করেন, তারাবীহ পড়েন। বেশি বেশি করে নফল ইবাদত করেন। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে কোরআন তেলাওয়াত করেন। আমার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমার তওবা কবুল করেন এবং আপনাদের মাঝে সুস্থ ভাবে ফিরে আসতে পারি। পরম করুনাময় আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করে দিন। বিশ্ববাসীকে হেফাজত কর

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581