===============
নাসির উদ্দিন নয়ন যশোর সদর থানা প্রতিনিধিঃ
যশোরের কুয়াদায় সেই বহুল আলোচিত প্রতারক হাবিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
জানা যায়, মনিরামপুর উপজেলার বোয়ালিয়াঘাট উত্তর পাড়া গ্রামের মৃত কালু গাজীর ছেলে সামাদ গাজী, চালকিডাঙ্গা গ্রামের রোস্তম গাজীর স্ত্রী মোছাঃ কাজল, ভবানিপুর গ্রামের মৃত সোনা মোল্লার ছেলে মোজাফ্ফর, সদর উপজেলার বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী হাসিনা খাতুন, কামালপুর গ্রামের আব্দুল মালেক পাটোয়ারির ছেলে আলি আহম্মদ এই ৫ জন বাদি হয়ে গত ০৭-০৬-২০ ইং তারিখে যশোর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। মনিরামপুরের কর্ন্দপুর গ্রামের ফারুখ হোসেনের স্ত্রী শম্পা নাজনীন বাদি হয়ে ১৩-০৬-২০ ইং তারিখে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মনিরামপুর এর কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। সদর উপজেলার কুয়াদা সিরাজসিংগা গ্রামের মৃত জামাল সরদারের ছেলে মতিয়ার রহমান বাদি হয়ে ১৬-০৭-২০ ইং তারিখে যশোর পুলিশ কার্যালয়ে প্রতারক হাবিবের বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা অাত্মসাতের লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এছাড়া ও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, যশোর মনিরামপুর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত জোহর গাছির ছেলে বহুল আলোচিত প্রতারক হাবিবুর রহমান (৩৫) এক সময় কুয়াদা বাজার বিশ্বাস টেইলার্সে দর্জির কাজ শিখতেন। প্রতারক হাবিবুরের পিতা জোহর গাছি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারিকেল গাছ পরিষ্কার করে বেড়াতেন। যার কারনে মানুষ তাকে জোহর গাছি বলে ডাকতেন। পিতা গরীব ছিলেন বলে ছোট থাকতেই হাবিবুর প্রাইমারি স্কুল থেকে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে দর্জির কাজ করতো। এভাবেই চলতে থাকে দীর্ঘদিন। তারপর থেকই যেন অাঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। গত পাঁচ – ছয় বছর ধরে শুরু হয় মানুষের কাছ থেকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া তার কাজ। এই প্রতারক হাবিবুর মনিরামপুর উপজেলার পাড়েলি গ্রামের গণির ছেলে শাহিনকে পুলিশের এস আই পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৪ সালে লিখিত ডেমির উপরে ৫ লক্ষ টাকা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে অগ্রিম ৩০ হাজার টাকা নেয়। একই উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে জাহিদুল ডাক্তারকে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সদর উপজেলার সিরাজসিংগা বাদুরতলার মৃত জামাল সরদারের ছেলে মতিয়ার রহমানের মগজ ধোলায় করে পুলিশের এস আই পদে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রামের সহজ সরল মানুষের মগজ ধোলায় করে সরকারির চাকরির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল এই প্রতারক হাবিবুর রহমানের উদ্দেশ্য। সারা বাংলাদেশে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকলেও টনক নড়েনি প্রতারক হাবিবুর চক্রের বিরুদ্ধে যশোর জেলা প্রশাসন কর্মকর্তাদের। তার বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালী মডেল থানা ও মনিরামপুর থানায় একাধিক অভিযোগ থাকা সর্ত্বে ও প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই প্রতারক ব্যক্তি। হাবিবুরের কাছে অসংখ্যা ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন, তার মধ্যে যশোর সদর উপজেলার সতীঘাটা কামালপুর গ্রামের রফিক মাষ্টারের ছেলে মোশারফকে কুয়াদা খইতলায় কবিতা কোচিং সেন্টারে চাকরি দেয়ার নামে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই বাটপার হাবিবুর মনিরামপুরের হুরগাতি কর্ন্দপুর গ্রামের গণির ছেলে প্রবাসি ফারুখ হোসেনের স্ত্রী শম্পা নাজনীনকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ৯৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতারক হাবিবুর নিজ গ্রাম চন্ডিপুর আব্দুল জলিলের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা বন বিভাগে চাকরির দেয়ার কথা বলে নেয়। কেশবপুর উপজেলার গড় ভাঙ্গা গ্রামের আজিজের ছেলে মুকুলকে ঢাকায় সরকারি হেলথ কেয়ারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। কুয়াদা বাজুয়াডাঙ্গা গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে পাইনকে বিজয় টিভিতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। মনিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাটি সুন্দলি গ্রামের সামছুজ্জামান মন্টুকে বিজয় টিভির সাংবাদিক বানিয়ে দেয়ার নামে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সতীঘাটা কামালপুর গ্রামের মৃত মালেক পাটোয়ারির ছেলে আহম্মদ আলীকে সরকারি বন বিভাগে চাকরির দেয়ার নামে ৪০ হাজার টাকা চুক্তি করে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মনিরামপুরের ভবানিপুর গ্রামের মুজাফ্ফারের ছেলেকে চাকরির দেয়ার নামে ১০ হাজার টাকা হাতিয়েছে। কেশবপুরের বরণডালি গ্রামের মৃত রজব আলীর ছেলে ছালাউদ্দীনকে সরকারি পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। কেশবপুর ত্রীমোহিনী গ্রামের রাজ্জাকের ছেলে সোহরাব হোসেনের চাকরির দেয়ার নামে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়েছে এই বাটপার হাবিবুর রহমান। হাবিবুর বলে দেশে এমন কোন সরকারি দপ্তর আছে যে আমার যোগাযোগ নেই, আমি সব দপ্রে চাকরি দিতে পারি। এভাবেই সে সাধারন মানুষের মগজ ধোলায় করে বছরের পর বছর প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিজেই আত্মসাৎ করেছে বলে বিস্তর অভিযোগ। এই প্রতারক হাবিবুরের খপ্পরে পড়ে গ্রামের সহজ- সরল অনেক পরিবার সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। এর কি আসলেই দেখার কেউ নেই।
তার এহেন কর্মকান্ডে অতিষ্ট মানুয়,পরিত্রান চাই।
প্রশ্ন উঠেছে এই ধুরন্ধর প্রতারক হাবিবুর রহমানের খুঁটির জোর কোথায়? এ বিষয়ে ভুক্তভোগীসহ এলাকার সচেতনমহল দ্রুত প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply