নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গত ২৯ আগস্ট ২০২৪ বৃহস্পতিবার , বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের (BTEB) অধীনে জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা কাঠামো (NTVQF) সনদধারী সাড়ে তিন (৩.৫) লক্ষাধিক প্রশিক্ষণার্থীদের সংগঠন “বাংলাদেশ সকল TVET গ্রুপ সমন্বয় পরিষদ” বাংলাদেশ সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে। স্মারকলিপিতে তারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে NTVQF-CBT&A কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছে।
১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB) একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ট্রেড পর্যায়ের পাঠ্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের শর্ট কোর্স এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি (RPL) কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত, BTEB এর অধীনে প্রায় সাড়ে তিন (৩.৫) লক্ষ প্রশিক্ষণার্থীকে NTVQF-CBT&A সনদ প্রদান করা হয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (NSDA) কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ১লা জুলাই ২০২৪ থেকে BTEB-এর অধীনে চলমান CBT&A (Competency Based Training and Assessment) কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। “বাংলাদেশ সকল TVET গ্রুপ সমন্বয় পরিষদ” এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, কোনো বৈধ আইনের (BTEB আইন ২০১৮) মাধ্যমে পরিচালিত কার্যক্রমকে, একটি সভার সিদ্ধান্ত দিয়ে বাতিল করা যায় না।
সংগঠনের সমন্বয়ক আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে BTEB-এর সনদধারী প্রায় সাড়ে তিন (৩.৫) লক্ষ প্রশিক্ষণার্থীর উচ্চতর দক্ষতা নিশ্চিত না করেই তাদের পুনরায় একই স্তরের সনদ পেতে NSDA-এর অধীনে অ্যাসেসমেন্টে বসতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সাড়ে তিন (৩.৫) লক্ষ প্রশিক্ষনার্থীদের সময় এবং অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছে এবং তাদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
সমন্বয়ক সায়েরা খাতুন উল্লেখ করেন, BTEB ও NSDA একই কারিকুলাম দ্বারা পরিচালিত হলেও NSDA, BTEB-এর সনদকে গ্রহণ করছে না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের পেশাগত অগ্রগতিতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
সমন্বয়ক নাজমুল হুদা জানান, আইনগতভাবে NSDA-এর ভূমিকা মূলত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন, মান পর্যবেক্ষণ, এবং কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে, আইনগতভাবে BTEB কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ পরিচালনা, স্বীকৃতি ও নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা। যে প্রক্রিয়ায় BTEB-এর CBT&A কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রণীত বৈধ কোনো আইনকে (BTEB আইন ২০১৮) একটি সভার সিদ্ধান্ত দ্বারা বাতিল করা যায় কি ?
অন্যতম সমন্বয়ক মোঃ মতিউর রহমান জানান, NSDA এখনও প্রয়োজনীয় যথাযথ জনবল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। এর ফলে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে লম্বা সেশন জট সৃষ্টি হচ্ছে এবং নতুন ব্যাচ ট্রেনিং শুরু করা যাচ্ছে না, যার ফলে দেশের যুব সমাজ দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে পেশাগত অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে এবং ক্যারিয়ারের বিকাশে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
সমন্বয়ক আশেক মাহমুদ জানান, NSDA ২০১৯ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৩ হাজার প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ প্রদান করতে পেরেছে, যা BTEB-এর তুলনায় গড়ে মাত্র ২০ ভাগের এক ভাগ। অপরদিকে, BTEB ২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন (৩.৫) লক্ষ প্রশিক্ষণার্থীকে সনদায়ন করেছে।
স্মারকলিপির অনুলিপি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছেও প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদানকালে সংগঠনটি জোরালোভাবে অনুরোধ জানিয়েছে যে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে NTVQF অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হোক এবং শিক্ষার্থীদের সনদের মূল্যায়ন ও গ্রহণযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হোক।
সংগঠনটি আশা করছে যে, তাদের এই দাবির দ্রুত যথাযথ বাস্তবায়ন দেশের কারিগরি শিক্ষার মানউন্নয়ন এবং দক্ষ কর্মী তৈরির প্রক্রিয়াকে পুনরায় গতিশীল করবে।
Leave a Reply