রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপকূল বাসীর জিবন (পর্ব)…………..(১)

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০

ইমাম হোসেন হিমেল স্টাফ রিপোর্টার

কলাপাড়ায় সাইক্লোন আম্ফানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত কাঁচা বাড়ী ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আম্পানে বুধবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে ঝড় আর বৃষ্টি প্রবল বেগে চলে। নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয় জেলা শহরসহ নিম্নাঞ্চল।প্রবল বেগে রাতে বেশ কয়েকবার হানা দেয় সুপার সাইক্লোন’আম্ফান’।এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়ে।গ্রামাঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা বাড়ি ঘর।ভেসে গেছে মাছের খামার। পানিবন্দী ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, এছাড়া জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িঁ বাধের বাহিরে অন্তত ২,শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদিতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি ৭ থেকে ৮ ফুট পানি বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নন্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ৯ শতাধিক মাছের ঘের পুকুর থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ নদীতে ভেসে গেছে।

কলাপাড়ায় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে নদীর পাড়ের ঘর বাড়িগুলো তলিয়ে যায় নিমিষেই। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে। গাছপালা ভেঙে পড়ে ছিড়ে যায় বিদ্যুতের তার। অনেক রাস্তাঘাটে গাছ পড়ে চলাচলে বাধা গ্রস্থ হয় সাধারণ মানুষ।

ফিরে দেখা ১৯৭০………………………….

কলাপাড়ার উপকূল ঝুড়ে প্রাই় সব জায়গায় রয়েছে সাগর প্রত্যেকটি এলাকা থেকে মাত্র ২-৩কিলোমিটারের ব্যবধানেই সাগর, সাগরের শব্দে এখানকার মানুষের ঘুম ভাঙা সাগরের শব্দে এখানকার মানুষের কাজ করা। সাগর পাড়ের মানুষের আয়ের উৎস হলো একমাত্র মাছ শিকার করা কখনো জীবন দিতে হয় জেলেদের তবুও এ সংগ্রাম নিজের সংসার পরিজন আত্মীয়স্বজনকে ভালো রাখতে হলে একটু চ্যালেঞ্জ তো নিতেই হবে, নিজেকে ভালো রাখতে হয়, নিজের সন্তান ছেলে-মেয়ে আত্মীয়-স্বজন সবাইকে যখন ভালো রাখার দায়িত্ব যখন কাঁধে আসে তখন মৃত্যু জেনে সাগর পাড়ি দিতেই হয় দুমুঠো ডাল ভাতের জন্য।

এক বৃদ্ধার কাছে ৭১ সনের বন্যার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন।

বৃদ্বার নাম সুফিয়া বেগম তিনি বলেন, কি বলবো বাবা তোমার সাথে আবার মনে করিয়ে দিলে আত্মীয় স্বজন হারানোর কথা, বলে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। শোন বাবা তখন ত এত উন্নাত ব্যাবস্তা ছিলো না রেডিও টিভি কিছুই ছিলোনা এখনকার মত এত তারাতারির কারো সাথে যোগাযোগ করা যেতনা গ্রামের মানুষ বলাবলি করতো লাগলো পানি উঠবে বন্যা হবার সম্ভবনা আছে। তখন ছিলো রোজার সময় মাগরিবের আজান দিয়েছে কেউ কেউ রোজা খুলে হালকা কিছু মুখে দিয়েছে কেউ আবার শুধু পানি খাচ্ছে, এমন সময় দেখি ঘরের পিড়ায় পানি উঠে গেছে। ২-৩-মিনিটে দেখি ঘরের দরজা জানলা তলিয়ে গেছে থালা বাসন অসবাপএ সব ভাসছে, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে কারো কোলে ছিলো, কেউ শেষবারের মতো দেখতে ও পাড়িনী। ঘরের মাচায় উঠে বসে রইলাম আর চারদিকের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম আমার ছেলে কই বাবা কই মা কই ভাই কই বোন কই, আর আমার পরিবারের সবাইকে ডাকাডাকি করতে লাগলাম আর কাঁদতে রইলাম।

অনেক সময় কেটে গেলে পানি আর বাড়তে লাগলো তখন সবাই প্রান বাঁচাতে ছুটতে লাগলো কেউ তালগাছ কেউ বড় গাছ যে যেখানে যেভাবে থাকতে পাড়ছে সে সেই ভাবেই রইলো।

আমার তিনমাসের একটা ফুটফুটে বাচ্চা ছিলো আমি তাকে নিয়ে একটি গাছ ধরে রইলাম তখন পাশ থেকে আমার বৃদ্ধা বাবা ভাসতে ভাসতে যাচ্ছিল তখন তাকে ধরতে গেলে আমার হাত ফসকে আমার বাচ্চাটি ছুটে যায় কোথায় যে চলে গেলো বুঝতে পারলাম না, বাবাকে ধরে যখন কাছে আনলাম বাবা শুধু বললো তোর মা মনে হয় নেই বলেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো হতভম্ব হয়ে গাছ ধরে জুলে রইলাম। দুইদিন পড় শুধু লাশের গন্ধ চারদিকে পাহাড় হয়ে রইলো ডোবায় খালে বিলে শুধু লাশ আর লাশ। যারা বেঁচে ছিলো তারাও অসহয় হয়ে পড়ছে খাবার নেই ঘর নেই আগুন নেই খুদার জ্বালায় সবাই কাতরাচ্ছে, এখন ও রাতে সপ্ন দেখি ওই দিনগুলো বাঁচাও বাঁচাও।

ধুলাসারের এক মহিলার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন….নিষ্ঠুরতম দিন গুলো এখনো কাঁদায় আমার তিনটি সন্তান ছিলো তাদের নিয়ে আম গাছে ঝুলে রইলাম দুই কাঁধে দুই সন্তান কোলে এক সন্তান তিন জন ধরে রাখতে পাড়ছিলাম না কাকে ছেরে কাকে রাখবো বুঝতে পারছি না সব আমার সন্তান। কোলের ছেলেটাকে ছেরে দিলাম ছারার সাথে স্রোতে তলিয়ে যায় এক ডেউতে আবার আবার আমার কোলে ফিরে আসে। তখন কেঁদে বললাম আল্লাহ এত শাস্তি সহ্য করতে পাড়বো না আমাদের মাফ করো আবার ছেরে দিলাম। চলে গেলো আমার কলিজার টুকরো আর ফিরে আসলোনা, এভাবেই দুঃখ কষ্টে চলছে উপকূল বাসীর জিবন।

এরপর, দেখলাম সিডর রেডিও শুনলাম ৭ নাম্বার হুশিয়ারি সর্কেত পানি উঠবে সবাই ব্যাস্ত কেউ সাইক্লোন সেন্টারে যাচ্ছে কেউ মাটির কেল্লায় আমরা ও রওনা দিলাম হঠাৎ দেখি বেড়িঁ বাধ থেকে পানি ঘরিয়ে পড়ছে, বাতাস ও বৃষ্টি বাতাসে গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে আছে অনেক কষ্ট করে সাইক্লোন সেন্টারে পৌঁছাতে পাড়লাম।

বিশেষ করে আবহাওয়া খারাপ হলে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ হয়ে যায় তখন লাইট চার্জ মোবাইল চার্জ নেটওয়ার্ক রেডিও টিভি সব বন্ধ হয়ে যায় তখন আবার ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেখান থেকে কিছু দুর এসে এক জেলের সাথে কথা বললাম,,
জাতীয় সরেজমিন পএিকার রিপোর্টারদের সাথে একজন জেলের সাথে কথা হয় দীর্ঘ সময়, জেলের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার নাম ছওার ফরাজী আমার বাসা এই সাগর পাড়েই আমার বয়স প্রাই ৭৫ বছরের কাছাকাছি দীর্ঘ ৫০ বছরের মত আমি সাগরে সাথে আছি আমার বাসা ওই বালুর ধুপে একটা ভেরাবিহিন ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করে আসছি আমার দুই ছেলে এক মেয়ে ছেলে দুটো একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আর একজন কলেজে লেখাপড়া করাচ্ছি। তিনি আর বলেন আমি চাইনা আমার ছেলে জেলে হোক, আমার সপ্ন আমি তাকে অফিসার বানাবো, কারন আমি জানি ওই সাগরের নিষ্ঠুরতা এই পঞ্চাশ বছরে আমি অনেক লাশ তুলেছি এই সাগর থেকে অনেক কে ভাসতে দেখেছি দিনের পড় দিন, আমি চাইনা আমার ছেলেকে হারাতে, তাই নিজের যৌবনের অনেক সময় পাড় করেছি সাগরের বুকে এদের ভবিষ্যতের জন্য আজ যখন সরকার এত সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন আমি আমার সন্তানকে লেখাপড়া করাবো।

১১৪ পটুয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মহিব্বুর রহমান মহিব বলেন…..আমি ছোট বেলা থেকেই এই উপকূলে বসবাস করে আসছি আমি জানি এই উপকূল বাসীর জিবন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাছে আমাদের বিশেষ অনুরোধ আমাদের অনেক সাইক্লোন সেন্টার ধরকার, অনেক বেড়িবাঁধ নষ্ট হয়ে গেছে এগুলো খুব তারাতারী করা ধরকার আমাদের প্রতি আপনার দৃষ্টি আছে সেটা কলাপাড়ার সকল মানুষ জানে আমাদের সমস্যা গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581