ইতিমধ্যেই ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমল গুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈদ আমাদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসব যেনো আমাদের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। তাই ঈদ হবে আর তাতে আনন্দ হবে না তা কি করে হয়? নতুন নতুন জামা, পাঞ্জাবি পড়ে পাড়ায় পাড়ায় না বেড়ালে চলে, নতুন নতুন শাড়ী ও জামা পড়ে নানান স্টাইলে সাজুগুজো করে এক আত্মীয়ের বাড়ী থেকে আরেক আত্মীয়ের বাড়ী না গেলে তাঁরা অসামাজিক ভাববে না, ভাববেই তো!! ঈদ তো আর প্রতিদিন হয়না, বছরে ঘুরে ফিরে এক বার আসে। কত দিন ঘরে বন্দি হয়ে থাকা যায় বলেন, তাই এবার ঈদে এর সুদ আসলে পুষিয়ে নেয়া হবে। বাঙ্গালী সংস্কৃতি তো আর এক দিনের নয় শত শত বছরের পুরোনো সংস্কৃতি বলে কথা। করোনা ভাইরাস তথা কোভিট-১৯ এ আমরা অনেক উন্নত দেশগুলো থেকে নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিলাম তবে এখন সময় এসেছে এগিয়ে যাওয়ার। পিছিয়ে পড়ার দিন শেষ। বাঙ্গালীরা হলো বীরের জাতি এরা পিছিয়ে পড়বে তা তো মেনে নেয়া যায় না। যে সব দিকে পিছিয়ে ছিলাম :
১)করোনা’র প্রস্তুতি : করোনা,র প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা ছিল প্রয়োজনের চাইতে খুবই কম।অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তারগন ও এক ধরনের ভীতির মধ্যে ছিলেন, এতে করে সাধারন মানুষ, ডাক্তার ও হাসপাতাল গুলোতে একটু বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। উন্নত দেশগুলোতে যেমন পর্যাপ্ত হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স, ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা ছিল, সে দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। এখন এগিয়ে যাওয়ার লক্ষে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতাল, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কাজেই করোনা’র কত শক্তি তা দেখা যাবে। এ দেশ থেকে তাকে পালাতেই হবে।
নোট: উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা এত উন্নত এবং জনগণের এত সচেতনতার বলেও মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে পারছে না।
২) নক ডাউন সীথিল : লক ডাউন সীথিল করনের দিক থেকে আমরা পিছিয়ে থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে আমরা সীথিল করে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমারা উন্নত দেশগুলোর বিশেষ করে চীন, আমেরিকা, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও অন্যান্য দেশের চাইতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে জনজীবন স্বাভাবিক করছি। চাইলে তাঁরা আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন।
নোট: উন্নত দেশগুলো যেখানে নাগরিকদের জীবন এবং নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে করতে ঘুম হারাম, আর তখন যেনো আমরা ঘুমিয়ে আছি। উৎসব করতেই হবে।
৩) আক্রান্তদের সংখ্যা : আক্রান্তের সংখ্যা উন্নত দেশগুলোর চাইতে অনেক কম, সে তুলনায় বলতে গেলে নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। তবে পরীক্ষার সংখ্যাটা বাড়ালে, ঈদকে সামনে রেখে আমরা আশা করছি উন্নত দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবো এবং প্রথম স্থান টা আমরাই অধিকার করবো।
নোট: ইতিমধ্যেই এর অগ্রগতি লক্ষণীয়, প্রতি দিনই আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। উন্নত বিশ্বে যেখানে কমছে।
৪)সুস্থ্য হওয়ার সংখ্যা : উন্নত দেশগুলোতে প্রতিদিন সুস্থ্য হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলছে, এক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অবশ্যই এতেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।
নোট: সুস্থ্য হওয়ার সংখ্যা খুবই কম, যা আমাদের কাছে কোন উৎকন্ঠার ব্যপার নয়। দৃঢ় মনোবলই আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৫) মৃত্যুর সংখ্যা : এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে, সে সব দেশের তুলনায় জনসংখ্যার বিচারে মৃত্যুর সংখ্যা নেই বললেই চলে। কোথায় ৭০ হাজার জন আর কোথায় ১৮৫ জন । তবে আশার কথা হচ্ছে যেহেতু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শপিংমল খোলে দেয়া হবে, তাতে করে খুব একটা বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয়া সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে।
নোট : ইতি মধ্যেই এর শুভ লক্ষণ দেখা দিয়েছে, করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই অনেকের মৃত্যুর খবর বেরিয়েছে। তবে এভাবে চলতে থাকলে আশাকরা হচ্ছে, ঈদের নামাজ আদায় না করে শুধু জানাজা নামাজ আদায় করতে হবে সবাইকে। বিশেষজ্ঞদের মতে এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনের দিনগুলো হবে ভয়াবহ।
উপসংহার : এ সময়ে মানুষ যেখানে খেতে পারছে না, তাঁরা কি ঈদ নিয়ে ভাবছে নাকি বেঁচে থাকার কথা ভাবছে!, যাঁরা দুবেলা খেতে পারছে না তাঁরা কি নতুন জমা কেনার কথা ভাবছে!, যাঁরা ঘর থেকে বের হওয়ার আতংকে থাকে তাঁরা কি ঈদের কেনাকাটা করার কথা ভাবছে! যাঁরা ভাবছে নিরাপদ দূরত্বে থাকলে এ যাত্রায় বেঁচে গেলে যেতেও পারি, তাঁরা কি ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ভাবছে! যাঁরা ভাবছে এ বার বেঁচে গেলে নিজেকে শুধরে নেবে কিংবা নতুন করে নিজেদের গুছিয়ে নিব, তাঁরা কি ঈদের শপিং নিয়ে ভাবছে! যাঁদের হাতে তিনবেলা খাবার কেনার টাকা নেই, তাঁরা কি ঈদের শপিং করার কথা ভাবছে! তাহলে ঈদের শপিং নিয়ে ভাবছেটা কে? কাদের জন্যে ঈদের শপিং করার ব্যবস্থা করা হলো। একটা ঈদ কি আমরা পুরাতন জামায় করতে পারি না, শুধু নিজেদের বাঁচার জন্য? সত্যিই কি পারিনা! বাঁচবো বলে। ঈদ পরবর্তী ভয়াবহতা জাতি কিভাবে সামাল দিবে? সেটা নিয়ে ভাববার সময় কি আছে কারো??????
লেখক: মুহাম্মাদ আল মামুন
কথাসাহিত্যিক ,কবি , গীতিকার ও ব্যাংকার ।
Leave a Reply