প্রশ্নই আমার আজকের লেখার শিরোনাম। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে কাঁপছে পুরো বিশ্ব। মরছে লাখে লাখে। আক্রান্ত হচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। বাদ নেই আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ। ১৫ হাজারের অধিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ২ শতাধিক মারা যাওয়ার বাস্তবতায় বিগত ২ মাসে সরকারের লকডাউন ঘোষণায় অচল প্রায় দেশ। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিকে সরকার যেমন হিমসিম খাচ্ছে। বিপাকে পড়েছেন এ দেশের শ্রমজীবি মানুষ। সবচেয়ে করুন পরিস্থিতিতে পড়েন দিনমজুররা। প্রায় ভিখারীতে পরিণত হয়েছেন তারা। খাদ্যের জন্য রাস্তায় নামতে দেখা যাচ্ছে। প্রভাব পড়েছে দেশীয় শিল্পকারখানায়। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার শিল্পপতিদের দাবীর মুখে বাধ্যহন খুলে কারখানা খুলে দিতে।
এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয়তার তালিকায় সব কিছুই খুলে দেয়া হয় সীমিত আকারের নামে। শর্ত জুরে দেয়া হয় স্বাস্থ্য বিধি মানার। এমনকি ধর্মীয় উপাসনালয়ে চলে লকডাউন বিধি নিষেধ। কাগুজে কলমে বিধি নিষেধ কি আর অত সহজে কেউ মানে? তবে হয়তো দুএকজন! যারা মানে তারা সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছেন। এমন চিত্রও দেখা যায়। কিন্তু ক্ষতিপুরণের কোন উপায় নেই। এদিকে করোনার ভয়াবহতা এমন যে, কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে তার বাড়িতে লাল পতাকা টানানো হচ্ছে। মসজিদে মাইকিং করে তাকে আলাদা করা হচ্ছে। তার বাড়ির লোকজনকে কোথাও সামাজিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। যদিও সব জায়গায় না। আতঙ্কটা এতো যে, স্বামী আক্রান্ত হয়েছে শুনে স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে। মাকে ফেলে দেয়া হচ্ছে নির্জনে। ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। আক্রান্ত চিকিৎসকদের লাঞ্ছিত করছে। মারা গেলে দাফন করতেও কাছে যাচ্ছে না স্বজনরা। সবচেয়ে ভয়াবহ হাসপাতাল গুলোর চিত্র। সেবাদানকারীরা আক্রান্ত হওয়ায় বিপাকে রোগীরা। বিধি নিষেধ মানাতে যেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব খবর জাতির কাছে তুলে ধরতে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন।
মোটকথা ছোঁয়াছে এ করোনাভাইরাস মানবতার চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। চিকিৎসা না থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুধুমাত্র সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ও পরিচ্ছন্ন জীবন যাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। ঘরে থেকে সংক্রমণ রোধ ছাড়া এর থেকে বাঁচার কোন বিকল্প নাই মনে করা হচ্ছে । কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এ দেশের সরকারের সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে আমরা আছি যে যার মতো।সরেজমিন বাস্তবতা এমন নিষ্ঠুর! যেন সবকিছু আগের মতোই আছে। কারো মনে বিন্দু পরিমাণ যেন ভাবনা নেই। হাটবাজারের চিত্র তাই বলে। তবে শুধু সচেতনরাই যেন বোকা বনে গেছেন। বাস্তবতা হলো এমন, ১১ ই মে ২০২০। এদিন দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০৩৪ জনে। ক্রমেই বাড়ার দিকে। অতি প্রয়োজনে কিংবা জরুরি পেশাগত কারন ছাড়া আমি বাসা থেকে বের হইনা। সুন্দর এ ভুবনে আমারও বাঁচতে ইচ্ছে করে। বাবা তো নেই! পরপারে চলে গেছেন আজ প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে আমার মা, স্ত্রী,সন্তানদের মায়ায় জীবন জীবিকার যুদ্ধ আমারও আছে। ভাই,বোন বন্ধু বান্ধব, গুরুজন,পাড়া প্রতিবেশিদের সঙ্গে সুস্থ্য থেকে আরো বহুযুগ বাঁচার আঁকুতিটা স্রষ্টার কাছে আমারও আছে । তাই একটু সচেতন থাকার চেষ্টা করি। আমার জন্ম উপজেলা রূপগঞ্জে বসবাস। সামনে ঈদ। সীমিত আকারে সবকিছুই খুলে দেয়া হয়েছে। তাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুভাকাঙ্খির বিশেষ উপহার পাওয়া উন্নত পিপিই পরিধান করে কিছু জরুরি কেনাকাটার জন্যই বেরিয়ে ছিলাম এদিন। দেশের বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়ায় গেলাম। পরিস্থিতি দেখে অন্য বছরের ঈদের প্রাক্কালে যেমন জমজমাট থাকে;তার থেকে কিছু কম দেখিনি। মানুষগুলো আমার মতো কেনা কাটা করতে মার্কেটে চলে আসছেন। তবে তাদের বেশির ভাগ জনেই কোন নিরাপত্তা গ্রহণ করেননি। এমনকি বিক্রেতারাও স্বাস্থ্য বিধি মানতে পারেন নি। জীবানুনাশক নাকি খুব দামি। সকালে এক লিটার বোতলে ব্লিচিং মিশ্রিত জীবানুনাশক নামীয় পানি ১ ঘন্টায় স্প্রে করলেই শেষ। পরে আবার সে বোতল ভরার সময় কই? কিংবা ব্লিচিং এর টাকা কই? তবে আমি স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিবারের অনিচ্ছায় গিয়েছিলাম।
অনেকেই নিরাপদ কিছু না পড়ায় আমি যেন এক সার্কাসের বহুরুপী সাজে ভীন গ্রহের কোন মানুষ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছি। মনে হচ্ছিল, আমি চাঁদে ভ্রমণ করে নীল আর্মস্টং সেজে প্রবেশ করেছি মার্কেটে। কারণ, মার্কেটে আমিই পিপিই পরিধান করে প্রবেশ করেছি। এটা বেশিরভাগ লোকই ফেলফেল করে তাকাচ্ছিলো। এ হলো আমাদের সচেতনতা। তাই আমার প্রশ্ন কোথায় সচেতনতা? কোথায় লকডাউন? বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা যেখানে নিজেদের পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না। সেখানে সরকারের এতো নির্দেশনা,এতো প্রণোদনা কারজন্য? কাদের জন্য কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করে সব অচল করা হলো? নিশ্চয়ই জনগণ? হ্যাঁ, সেই জনগণ কতটুকু সচেতন সেটাই আমার প্রশ্ন। আমরা আদৌ কি আমাদের নিজের ভালোটা বুঝছি না নিজে আঘাতের অপেক্ষায় আছি?
আমি সাধারণ নাগরিক। কিন্তু নিজেকে সচেতন দাবী করি শতভাগ। একজন চিকিৎসক এ গরমে দিনে প্রায় /১০ ঘন্টা পিপিই পরিধান করে সেবা দিচ্ছেন। আপনি জানেন? এই গরমে পিপিই পরিধান করে দীর্ঘ সময় থাকা কত কষ্টদায়ক? তাদেরও তো পরিবার পরিজন আছে। তাদেরও তো জীবনের ঝুঁকি আছে। তাহলে কি কারনে আমরা কোন বিধিই মানছি না? বিধি মানতে কি পিপিই প্রয়োজন? মোটেই না। যার যার অবস্থান থেকে যদি সচেতন হতেন, যার যার নিরাপত্তা সে সে গ্রহণ করতেন।তাহলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বাড়তো না। নিজের বুঝ অন্য বুঝিয়ে দিবে এমন কেমনে ভাববে জাতি? জোর করে কি ঔষুধ সেবনে বাধ্য করবে কেউ নাকি নিজের ঔষুধ নিজেই খেতে হবে। হুম, বলছি, সবকিছুই স্বাভাবিক চলতে পারতো, যদি সবাই সবার ক্ষেত্রে সচেতন হতো। তবু আমরা আশাবাদি। আঁধার কাটবে একদিন। আমরা সবাই নির্ভয়ে হাটবো, সময় কাটাবো, এবাদত করবো, ঘুরবো আর দেখবো দুনিয়া। হাসিমাখা মুখগুলো হাসবে আবার, হাতে হাতে রাখবে করোনা মুক্ত ধরায়।
লেখক: সাংবাদিক
মাহবুব আলম প্রিয়
Leave a Reply