শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

কক্সবাজারের পাথুরে সী-বীচ ইনানীতে চলছে ব্যাপক দখল বাণিজ্য; হচ্ছেনা সু-পরিকল্পিত উন্নয়ণ! বিস্তারিত পড়ুন : ? Matrijagat TV

মোহাম্মদ ইয়াকিন, স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট টাইম সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২০

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সী-বীচ। কক্সবাজার সী-বীচের অন্যতম একটি আকর্ষিত  পর্যটন স্পট হলো ইনানী সী-বীচ।কক্সবাজার জেলার পর্যটন সেক্টরে ইমারজিং টাইগার হচ্ছে ইনানী। ইনানী সী-বীচের নাম শুনলেই চুখের সামনে চলে আসে পাথুরে সী-বীচের সেই নৈস্বর্গিক সুন্দরতম দৃশ্য।

কিন্তু পর্যটকদের নিকট ইনানী সী-বীচ অন্যতম আকর্ষিত পর্যটন স্পট হিসেবে সু-পরিচিতি হলেও পর্যটকদের জন্য সার্বিক সুবিধা না থাকায় দিন দিন পর্যটকদের আগমন কমে যাচ্ছে ইনানী সী-বীচে ।

এদিকে উক্ত সী-বীচে বেড়েই চলছে দিন দিন দখল বাণিজ্য। কিছু মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা । অনুমোদন বিহীন ফটোগ্রাফারদের দৌরাত্ব সহ চলছে হাজারো অনিয়ম ।

উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য “ইনানী সী-বীচ ব্যবসায়ী বহুমূখী সমবায় সমিতি” (রেজি: ১২৭৫) এর সভাপতি ছৈয়দ হোছন এর নিকট স্মরণাপন্ন হলে তিনি জানান উক্ত ইনানী সী-বীচ সম্পর্কে বেশকিছু রহস্য। তিনি বলেন-

“ইনানী সী-বীচকে দেশ বিদেশের পর্যটকদের নিকট পাথুরে সী-বীচ হিসেবে সু-পরিচিত গড়ে তুলার কার্যকরী ভূমিকা রাখে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইনানী সী-বীচ ব্যবসায়ী বহুমূখী সমবায় সমিতির সকল সদস্যরা। দীর্ঘ ২০-২৫ বছর পূর্বে ইনানী সী-বীচ পর্যটন স্পট হিসেবে পর্যটকদের নিকট পরিচিত ছিল না। অত্র সমিতির সদস্যরা বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ইনানী সী-বীচেকে পর্যটকদের নিকট সু-পরিচিত গড়ে তুলে।

গণমাধ্যমের সহায়তায় এবং সরাসরি কক্সবাজার সী-বীচে গিয়ে পর্যটকদেরকে ভিডিও চিত্র দেখিয়ে,  বিভিন্ন রকম ব্যানার পেস্টুন, হ্যান্ড-লিবলেইট ইত্যাদি প্রচার করার মাধ্যমে পর্যটকদের নিকট ইনানী সী-বীচকে পাথুরে বীচ হিসেবে সু-পরিচিত লাভ করাতে সক্ষম হয়।

এক সময় ইনানী সী-বীচে পর্যটকদের জন্য কোন প্রকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী/বীচ কর্মী নিয়োজিত ছিল না। আমরা ব্যবসায়ীরা সরাসরি পর্যটকদের গাইড-লাইন হিসেবে কাজ করে সেবা প্রদান করতাম।

ইনানী সী-বীচকে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট হিসেব বিশ্বের কাছে আরো বেশী সু-পরিচিত করার জন্য তৎকালীন উখিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার মহোদয়কে সভাপতি করে সী-বীচ ম্যানেজম্যান্ট উপ-কমিটির গঠণ করা হয় ।

সী-বীচ ম্যানেজম্যান্ট উপ কমিটি ইনানী সী-বীচের ব্যবসায়ীদরেকে দোকান বরাদ্ধ দেওয়ার নিমিত্বে সোনালী ব্যাংকে স্থিত বীচ ম্যানেজম্যান্ট উপ-কমিটির CA/966  নং হিসাবে জনপ্রতি ৫০,০০০ টাকা করে প্রায় ১৭ জন ব্যবাসায়ীদের নিকট হতে টাকা জমা গ্রহণ করেন।

জমা গ্রহণ করার ১৫ দিন পর বীচ-ম্যানেজম্যান্ট উপ-কমিটির সভাপতি জনাব, শামীম আলরাজী সাহেব ফলক স্থাপন করে অত্র সমিতির সদস্যগনের বরাবরে বরাদ্ধকৃত মার্কেটের শুভ উদ্ভোধন করেন ।

তৎপরবর্তী নব-দায়ীত্ব প্রাপ্ত উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব, আবু আহমদ সিদ্দীকি সাহেব বীচ-ম্যানেজম্যান্ট উপ-কমিটির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বিগত ২১/০৪/২০০৯ ইং তারিখ জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর দোকান বরাদ্ধ প্রদানের জন্য সুপারিশ পত্র ইস্যু করেন ।

তৎপরবর্তী নব-দায়ীত্ত প্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম রহমান মাশুরুম মার্কেট করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ব্যবসায়ীদের স্থাপনা গুলো ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু পরিকল্পীত উন্নয়নের বাস্তব প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে কালক্ষেপন করতে থাকলে পুণ:বার আমরা ইনানীতে প্রায় ১০০ টি দোকানপাঠ স্থাপনা নির্মান করি।

ইউ.এন.ও মহোদয় পুণঃ আমাদের প্রায় ১০০ টি মতো দোকান গুলো ভেঙ্গে দিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি সাধন করেন।

এরপর থেকে বি. এস ৩৪৫৫ দাগের বিরোধীয় ২.৪০ একর জমি সম্পূর্ণ দোকানপাঠ শূন্য হয়ে যায় । উক্ত অবস্থায় আমরা অনন্যোপায় হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উক্ত বে-আইনী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে-বিগত ১৪/০৩/২০১০ ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্টে রীট মামলা নং – ৭৬২ দায়ের করে উক্ত জমি সংক্রান্তে পরবর্তী চুড়ান্ত নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উক্ত স্থিতাবস্থা বাজায় রাখার আদেশ হাসিল করি; যাহা অদ্যাবধিও বহাল ও বলবৎ আছে ।

ইনানী সী-বীচে জেলা প্রশাসক মহোদয় কার্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত বীচের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টরা বহিরাগত লোকের নিকট থেকে অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিরোধীয় জমিতে রাতের আধারে ২০/৩০ টি দোকান পাঠ নির্মাণ করার সুযোগ করে দেয় । উক্ত বিষয়ে তৎকালীণ উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মঈদ উদ্দিনের সু-দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি অবৈধভাবে গজিয়ে উঠা উক্ত দোকানপাঠ সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করে পর্যটকদের তৃষ্ণা নিবারণের কথা বিবেচনায় নিয়ে শুধুমাত্র করেকটি ডাবের দোকান রেখে দেয়।

OLYMPUS DIGITAL CAMERA

ইউ.এন.ও মঈন উদ্দিন সাহেবের উচ্ছেদের পর  বীচে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টরা আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে অত্র সমিতি বহির্ভূত বহিরাগত কিছু লোককে আবারো মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০/৩০টি দোকান পাঠ নির্মান করার সুযোগ করে দেয়। উক্ত অবৈধ স্থাপনা গুলোই বর্তমানে ইনানী সী-বীচে স্থিত আছে ।

সভাপতি আরো বলেন- বীচে স্থিত যে অবৈধ স্থাপনা গুলো রয়েছে সেগুলো গড়ে তুলার সুযোগ করে দিয়েছিলো বীচে দায়িত্বর সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু স্বার্থন্বেসী মহল। বর্তমানে বীচে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট সকলেই উক্ত স্থাপনা গুলো থেকে মাসিক এবং দৈনিক চাঁদা নিয়ে স্থাপনা গুলো বিদ্যমান রেখেছে।

সভাপতি আরো জানান, আমরা প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ইনানী সী-বীচ ব্যবাসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির পক্ষে দোকান বরাদ্ধ চেয়ে সহস্রবার আবেদন পেশ করলেও বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি কোন ধরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন না।

উক্ত জমিতে অত্র সমিতির সদস্যগণ দীর্ঘদিন যাবৎ দোকানপাঠ স্থাপন করে ব্যবসা বাণিজ্য উপলক্ষে দখলকার ছিলাম। শুধুমাত্র মহামান্য হাইকোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমরা দোকানপাঠ নির্মাণ করা হতে বিরত রয়েছি ।

মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ লংঘন করে অবৈধ স্থাপনাকারীদের বিরোদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থিত দোকান পাঠ স্থাপনা গুলো উচ্ছেদ করে দিয়ে, উক্ত ইনানী সী-বীচে সু-পরিকল্পিত উন্নয়ন করার জন্য মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আমি শতবার আকুল আবেদন জানিয়েছি । সম্প্রতি মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর আবারো উক্ত বিষয়ে একটি আবেদন পত্র দাখিল করেছি।

উল্লেখ্য যে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) উখিয়া, বিরোধীয় জমিতে পেরীফেরী অনুমোদন পূর্বক হাট বাজার নীতিমালা অনুযায়ী অত্র সমিতির সদস্যদের নিকট বরাদ্ধ প্রদানের মতামত প্রদান করেন; যা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের রাজস্ব শাখায় জমা আছে।  (স্বারক নং- ১১৭০- (১৫/১২/২০১৪ ইং)

গণমাধ্যমের মাধ্যমেও আমি মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ইনানী-সী-বীচের দিকে সু-দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি। কক্সবাজার সী-বীচের অংশ হিসেবে ইনানী সী-বীচ পাথুরে সী-বীচ হিসেবে দেশ বিদেশের পর্যটকদের নিকট সু-পরিচিত। অপার সম্ভাবনায় এই ইনানীতে সু-পরিকল্পিত উন্নয়ন সময়ের দাবী।”

উল্লেখিত বিষয়ে জানার জন্য মাতৃজগত ডেক্স হতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) উখিয়া মহোদয়ের সাথে ফোনালাপ করলে তিনি জানান-“ইনানী অপার সম্ভাবনাময় একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট। ইনানীকে অনেক পরিকল্পনা করে যেতে পারে ইতিমধ্যে আমরা কিছু পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। তবে উখিয়াতে আমি নব-নিযোক্ত সহকারি কমিশনার হিসেবে পূর্বের কোন পরিকল্পনার বিষয়ে এখনো জানার সুযোগ হয়নি। ইনানী সী-বীচ ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সহ সদস্যদের সাথে মত-বিনিময় করে ইনশা আল্লাহ আমরা ইনানীতে উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেবো।

গত ১৯/০১/২০২০ ইং তারিখ উখিয়া বার্তা নামক একটি অনলাইন পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা যায়, উক্ত বিষয়কে আমলে নিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান- ইনানীকে দেশের একটি দৃশ্যমান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য  সরকার পূর্ব নির্ধারীত একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ।

ঐ প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় সরকারি ব্যাতিত বেসরকারিভাবে কোন স্থাপনা নির্মান থেকে বিরত থাকা সহ বর্তমানে যে অবৈধ স্থাপনা গুলো রয়েছে তা যেনো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেয়। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ঐসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
© All rights reserved © Matrijagat TV
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
matv2425802581