ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় স্কুলছাত্র রাসেল রানা(১৮)’কে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিবেশি কয়েকজন কিশোর। এ ঘটনায় পুলিশ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
রোববার দুপরে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান মনির এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের মধ্য ভোপলা গ্রামের হেলাল ইসলাম ওরফে নাপিত (২২),পশ্চিম ভোপলা গ্রামের নাঈম ইসলাম নাসির (১৯),বোচাপুকুর ডাক্তারপাড়া গ্রামের কুদ্দুস আলী সুন্দর (১৭),রতন ইসলাম (১৭), সোহেল ইসলাম (২২), উত্তর বোচাপুকুর গ্রামের আল আমিন ইসলাম শাহিন (২০) ও বোচাপুকুর বিশুরদিঘী গ্রামের সামিউল ইসলাম (২৬)।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা যুবকরা ওই ইউনিয়নের পশ্চিম ভোপলা গ্রামের এক কিশোরীকে প্রায় সময় উত্যাক্ত করত। এটির প্রতিবাদ করে কিশোরীর ছোট ভাই ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া রাসেল রানা (১৫)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রেপ্তারকৃত কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা ওই স্কুলছাত্রেকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।
পরে ইভটিজিংয়ের বিষয়টি মিমাংশা করে দেয়া নাম করে গত ২৪ এপ্রিল কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা কৌশলে স্কুলছাত্র রাসেলকে তার বাড়ির পার্শ্বে ঈদগাঁহ মাঠে নিয়ে যায়। এসময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই স্কুলছাত্রকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখম করে তারা। এক পর্যায়ে কিশোরী গ্যাং এর সদস্যরা ওই স্কুলছাত্রের গলা কেটে হত্যা করে। এরপর নিহত স্কুলছাত্রের লাশ পাশবর্তী একটি ধান ক্ষেতে ফেলে তারা পালিয়ে যায়।
পরদিন ২৫ এপ্রিল খবর পেয়ে সকালের দিকে স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ধান ক্ষেত থেকে গলাকাটা অবস্থায় স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় ঐদিনই নিহত স্কুলছাত্রের বড়ভাই রাজু আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, মামলা দায়েরর পর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) আবু তাহের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চন্দন কুমার ঘোষসহ অন্যরা মিলে দিনরাত পরিশ্রম করেছে হত্যাকান্ডের সঠিক রহস্য উদঘাটনের জন্য। আমরা সফল হয়েছি, এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ৭ জনক গ্রেপ্তার করেছি।
তিনি বলেন, ৩০ এপ্রিল গ্রেপ্তারকৃত ৭ জনের মধ্যে ৩জন হেলাল ইসলাম, নাঈম ইসলাম ও কুদ্দুস আলীকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আদালতের বিচারক আরিফুল ইসলাম ওই ৩ জনের কাছ থেকে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি নেন। আদালতে তারা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন। এরপর আদালতের বিচারক তাদেরকে ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।
এছাড়াও গত ১৯ মার্চ ঠাকুরগাঁও শহরে জেলা প্রশাসন পার্কে ১ম শ্রেণির ছাত্রী নুপুরের (৮) লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত জাহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেয়া হয়। ১৬৪ ধারার জবানবন্দিনে জাহিদুল তার দোষ স্বীকার করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাঠায়।
সেই সাথে শহরে অভিনেতা লিটু আনামের বাড়িতে স্বর্ণালংকার ও টাকা চুরির ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এবং চুরি যাওয়া মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে সদরের গড়েয়া গোপালপুর এলাকার সূর্য্যা দেবনাথের বাড়িতে চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকার ও টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply